চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ গাজীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। প্রতারণা মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার ১১ বছর পর মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
বুধবার (২১ সেপ্টম্বর) দুপুরে খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মো. তারিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ৪২০ ধারার একটি মামলায় খুলনার অ্যাডিশনাল সিএমএম আদালত ইউসুফ গাজীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
ইউসুফ গাজী চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী চাইলে মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আগামী তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
জানা গেছে, দিয়াশলাই ফ্যাক্টরিতে কাঠ সরবরাহের যৌথ ব্যবসার প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে ২০০৪ খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন স্থানীয় হুমায়ুন কবির।
ওই মামলায় আদালত আসামিকে খালাসের রায় দিলেও ২০০৮ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খুলনা দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আপিল শুনানি শেষে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, এ রায় তিনি গ্রেপ্তার তথা আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে আসামিকে ৩০ দিনের মধ্যে সাজা ভোগের জন্য খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারি করে দণ্ডাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ২০১৭ সালে রিট পিটিশনটি পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে বিচারপতি মাইনুল হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের আদালত দণ্ডাদেশের স্থগিতাদেশ বাতিল করে পাঁচ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর ইউসুফ গাজী উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ২০১৭ সালে একটি পিটিশন দায়ের করলেও আদালত দণ্ডাদেশ স্থগিত না করে ১০ সপ্তাহের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু পিটিশন দায়ের করার নির্দেশ দেন। অন্যথায় তা খারিজ হবে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি লিভ টু আপিল করেন।
তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন সদ্য পদত্যাগী চাঁদপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী ওচমান গণি পাটওয়ারী। মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদায়ী চেয়ারম্যান ওচমান গণি পাটওয়ারীকেই ফের মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দণ্ডিত আসামি হওয়ায় আগের প্রার্থী ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিলের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।