পেটে কাঁচি রেখেই অপারেশন সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে। অপারেশনের দু’বছর পর এক্সরের মাধ্যমে ডাক্তাররা দেখতে পান পেটের মধ্যেই আছে ওই ঝকঝকে কাঁচিটি। আর এ ভুল অপারেশনের কারণে দু’বছর ধরে পেট ব্যাথায় ভুগেছেন মনিরা খাতুন। সম্প্রতি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন ডাক্তার।
এমন অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের খাইরুল মিয়ার মেয়ে মনিরা খাতুনের (১৭) সাথে। এলাকাবাসী, হাসপাতাল ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের মনিরা খাতুনকে (১৭) প্রায় দু’বছর আগে পেটে ব্যাথার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করান তার দরিদ্র বাবা মা। অপারেশনের কয়েক দিন পরেই মনিরাকে নগরকান্দা উপজেলার পৈলানপট্টি গ্রামে বিবাহ দেয়া হয়। বিয়ের পরেও তার পেটে ব্যাথা ছিল। এরপর তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে মনিরার পেটের বাচ্চা নষ্ট হলে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। এরপরেও বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসা করানো হয়, কিন্তু তার পেট ব্যাথা কমেনি। ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে প্রায় দু’বছর ধরে চাপিয়ে রাখেন পেট ব্যাথা। গত দু’দিন আগে তার পেটে অসহনীয় ব্যাথা উঠলে তাকে মুকসুদপুরের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। ওই ক্লিনিকে এক্সেরের মাধ্যমে ডাক্তাররা দেখতে পান যে মনিরার পেটের মধ্যে একটি ঝকঝকে কাঁচি আছে।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ বিষয়ে মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন ডাক্তারের সাথে আলাপ করা হলে তারা জানান, আমাদের সন্দেহ হলে তাকে একটি এক্সরে করতে বলি। পরে এক্সরে রিপোর্ট আসার পর কাঁচি দেখতে পাওয়া যায়। কয়েকজন চিকিৎসক বলছেন, গত ৩ মার্চ ২০২০ সালে একটি অপারেশনের সময় ভুলে তার পেটের ভেতরে এ কাঁচিটি রেখে দেয়া হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টারের স্বাক্ষরিত ছাড়পত্র অনুযায়ী বিষয়টি জানা যায়।
ডাক্তাররা বলেছেন, ওই কাঁচির হাতলে সামান্য মরচে পড়ে গেছে এবং ওই যুবতীর পেটের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে জড়িযে গেছে। দ্রুত অপারেশন করে কাঁচিটি বের করা না হলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
ওই যুবতীর খালু ঘুনষী গ্রামের শহীদুল ইসলাম। তিনি মুঠোফোনে জানান, আর্থিক সমস্যার কারণে অপারেশন করাতে দেরি হবে।
এ বিষয়ে ওই যুবতীর ভাই কাইয়ুম রহস্যজনক কারণে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি না। তবে যে ডাক্তার অপারেশন করেছিলেন তিনি আবার অপারেশন করে দিতে চেয়েছেন বলে জানান। এ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
খুলনা গেজেট/এএ