প্রকৃতিতে এখন কুয়াশায় মোড়া হিমেল হাওয়ার সদর্প উপস্থিতিতে শীতের আবহ বিরাজমান। শীতের আবির্ভাবের সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যায়। তাই সকলেই এ সময় ত্বকের একটু বাড়তি যত্ন নিয়ে থাকেন। তবে সাধারণত দেখা যায় যে পায়ের গোড়ালির প্রতি অনেকেরই যত্ন একটু কম থাকে। ফলশ্রুতিতে এ সময় অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। যাঁরা এ বিড়ম্বনা এড়াতে চান, তাঁরা একটু কষ্ট করে বাড়তি যত্ন নিতে পারেন। আবহাওয়ার শুষ্কতা আর পর্যাপ্ত আর্দ্রতার ঘাটতিতে পা ফাটার মত সমস্যা দেখা দেয়। অবশ্য শুধু শীতকালেই নয়, অনেকের সারাবছরই পায়ের গোড়ালির চামড়া ফেটে যেতে দেখা যায়। গোড়ালির ত্বকের শুষ্কতা বা স্তরীভূত মরাকোষের কারণেই শীত ব্যতীত অন্যান্য সময়েও পা ফাটা পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়াও অনেক বেশি হাঁটাচলা, দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজ করা, পানিশূন্যতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, সোরিয়াসিস, একজিমা, ছত্রাক সংক্রমণ, স্থূলতা ইত্যাদি কারণেও সারাবছর পা ফাটতে পারে। পরিধেয় জুতার বিভিন্ন সমস্যায়, যেমন- খোলা জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার, জুতোর পেছন দিকে ঘর্ষণ, জুতা ঠিকমতো ফিট না করা ইত্যাদি কারণেও গোড়ালির চামড়া ফেটে যেতে পারে। পা ফেটে গেলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা ও যন্ত্রণা হতে থাকে এবং হাঁটতে বেশ সমস্যা হয়। ত্বকের এই ফাটা স্থানে কখনো কখনো জীবাণু সংক্রমণও ঘটে থাকে। পা ফাটা এড়াতে তাই কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চলতে পারেন।
মোমবাতির মোমের সঙ্গে সরিষার তেল মিশিয়ে কিংবা গোলাপজলের সঙ্গে কিছুটা গ্লিসারিন মিশিয়ে এই মিশ্রণ ফাটা স্থানে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিতে পারেন। এতে পা ফাটা দ্রুত আরোগ্য হবে এবং ব্যথাও উপশম হবে। গ্লিসারিন ত্বক নরম রাখে আর গোলাপজলে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৩, সি, ডি ও ই এবং বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। এছাড়া পা ফাটার সমস্যা সমাধানে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, বাদাম তেল কিংবা তিলের তেল জাতীয় ভেজিটেবল অয়েলও দারুণ কার্যকর। এতেও কাজ না হলে ভ্যাসলিনের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তা ফাটা স্থানে মালিশ করতে পারেন। এই মিশ্রণ সেখানে দ্রুত শোষিত হয় বলে পা ফাটা দ্রুত সেরে যায়। পাশাপাশি এক কাপ মধু আধা বালতি গরম পানিতে মিশিয়ে এতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখলেও পা ফাটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
যদি কারো খোলা স্যান্ডেল বা জুতো পরার অভ্যাস থাকে, তাহলে ১০ দিনে অন্তত একবার পেডিকিওর করিয়ে নেওয়া উচিত। এছাড়া যাঁদের সবসময়ই পা ফাটে, তারা কখনওই পা শুষ্ক রাখবেন না। প্রতিবার পা ভেজানোর পর ভালোভাবে মুছে পায়ের গোড়ালি ও পুরো পাতায় ভেসলিন লাগিয়ে দিবেন। প্রতিদিন স্নানের সময় পিউমিক স্টোন ও ব্রাশ দিয়ে পায়ের গোড়ালি, নখ ও আঙুলের ডগা পরিষ্কার করে ফেলতে পারেন। কারণ পায়ের গোড়ালিতে মরা কোষ জমে জমে পুরু স্তর তৈরি হয়, যার কারণে গোড়ালি শক্ত হয়ে পা ফেটে যায়। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ পানি বা পানিজাতীয় খাবার কম খেলে ত্বকের শুষ্কতা এবং ঠোঁট বা পা ফাটার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত গরম পানি ত্বককে আরও শুষ্ক করে দেয়। এজন্য গোসলের সময় বা পা পরিষ্কার করতে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করাই শ্রেয়। এছাড়া বেশি সময় ধরে পা পানিতে ডুবিয়ে রাখাও ভালো নয়। শীতকালে গোসল শেষ করতেও খুব বেশি হলে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নিন। অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার ও অতিরিক্ত ঘষাঘষি ত্বকের শুষ্কতা বাড়িয়ে দেয়। তাই যতদূর সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। খালি পায়ে না হেঁটে ঠান্ডা বাতাসে বের হলে খোলা জুতা বা স্যান্ডেলের পরিবর্তে এ সময় বন্ধ জুতো ব্যবহার করুন। পায়ের মরা চামড়া ওঠাতে কখনোই নিজে নিজে ধারালো কিছু ব্যবহার করবেন না। ঝামা পাথর দিয়ে বেশি ঘষতে গেলে ত্বক কেটে যেতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীরা মৃত ত্বক ওঠাতে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
খুলনা গেজেট/কেএম