সর্বশেষ খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগে অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক এবং প্রশাসনিক শাখায় কর্মকর্তা/সমমান (৯ম গ্রেড) পদের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, স্থগিত হওয়া পদগুলোতে খুকৃবির উপাচার্যের স্ত্রী, মেয়ে এবং ছেলে আবেদন করেছিলেন। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত ছিল। বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনার মুখে গত ৯ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে তিনটি পদেই নিয়োগ কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
পথচলার শুরুতেই নিয়োগ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রহমান খান। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঐ পদে নিয়োগ পান তিনি। এরপর একাডেমিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার চেয়ে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে ও শিক্ষক নিয়োগে মনোনিবেশ করেন তিনি। সে সময় থেকেই খুলনার স্থানীয় যোগ্য প্রার্থীদের কৌশলে বাদ দিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ভিসির নিজ জেলা নোয়াখালী, রেজিস্ট্রারের (ভারপ্রাপ্ত) নিজ জেলা নরসিংদী ও ভিসির স্ত্রীর নিজ জেলা বরিশালের লোকজনকে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একচেটিয়া পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। আর এনিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও আলোচিত হয় বেশ জোরে সোরে। তারই ধারাবহিকতায় স্ত্রী পুত্র কন্যাকে নিয়োগের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশে বাঁধার মুখে পড়লেন উপাচার্য।
এর আগে নীতিমালা শিথিল করে এবং অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এজন্য তাঁদের নিয়োগ কেন বাতিল করা হবে না, সে জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। এতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানকে ব্যাখ্যা দিতেও বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া রাবির বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের খবর ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে পত্র-পত্রিকায়।
শুধু রাজশাহী বা খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এধরণের অভিযোগ প্রায়ই জানা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে। কখনো ক্ষমতাসীন নেতাদের দোহাই দিয়ে, আবার কখনো দলীয় কথা বলে, আবার কখনো বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের নাম ভাঙ্গিয়ে মূলত: উপাচার্যদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও উত্থাপিত হচ্ছে বেশে গুরুত্ব সহকারে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে উপাচার্যকে দেয়া ক্ষমতার অপব্যাবহার করে এ কাজটি তাঁরা করে যাচ্ছেন বেশ স্বাচ্ছন্দের সাথে। উপাচার্যদের এসব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ কখনো কখনো ক্ষীণভাবে হলেও তা অনেক সময় পৌঁছায় না ইউজিসি বা মন্ত্রণালয়ে। ফলে তাঁরা পরবর্তীতে এ কাজটি করেন ‘নিজেদের অধিকার ও ক্ষমতা’ মনে করে।
এ বিষয়ে কথা হয় খুলনার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের সাথে। এ ব্যাপারে তাঁরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন :
১. সরকার ভিসি নিয়োগ দেয়ার আগে উক্ত শিক্ষকের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালভাবে যাচাই করে দেখতে পারে।
২. ইতিপূর্বে প্রশাসনিক পদের কোন অভিজ্ঞতা তাঁর আছে কি না, তা দেখা যেতে পারে।
৩. প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন কি না তা যাচাই করা যেতে পারে।
৪. উক্ত শিক্ষকের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখা যেতে পারে।
৫. একাধিক টার্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভিসি পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবারের সদস্য, নিকট আত্মীয় বা এলাকার লোকজনের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করেছেন কি না তা দেখা যেতে পারে।
৬. কাউকে ভিসি পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করার আগে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয়কে নিয়োগ দেবেন না’ মর্মে অঙ্গিকারনামা নেওয়া যেতে পারে তাঁর কাছে থেকে।
৭. মেয়াদ শেষে ভিসিদের কার্যকাল মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে, গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ থাকলে ভবিষ্যতে সরকারী বা বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্য ঘোষণার বিধান রাখতে হবে।
তবে সরকারের চেষ্টার সাথে সাথে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পাবলিক বিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ ওঠা বন্ধ করতে হলে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই। কারণ তাঁরাই তো এ পদে নিয়োগ পান, কোন আমলা নয়।
খুলনা গেজেট /এমএম