খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৬০
  হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত, নিশ্চিত করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি
  ছাত্র আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটি

পানিতে ভাসছে প্রতাপনগরের কয়েকটি গ্রাম, বাড়ি ছাড়ছে গৃহহীন পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে বিকল্প রিং বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের অসংখ্যা ঘরবাড়ি। গত চারদিনে ওই বিকল্প রিংবাঁধ সংষ্কার করা না হওয়ায় লবণ পানিতে থৈ থৈ করছে পুরো এলাকা। নদীর -স্রোতে চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে বসত ভিটা। ফলে শেষ সম্বল হারিয়ে পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন অসহায় গৃহহীন অনেক পরিবার।

ঘূর্নিঝড় আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ইয়াসের আঘাত। সবশেষ ১০ সেপ্টেম্বর খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রতাপনগর গ্রামের মানিক হাওলাদারের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশের বিকল্প রিং বাঁধ ভেঙ্গে ফের প্লাবিত হয় প্রতাপনগর, তালতলা, মাদারবাড়িয়া, কুড়িকাহনিয়া ও কল্যাণপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রতিদিন দুপুরে ও রাতের জোয়ারে নিয়ম করে পানিতে ভাসছে ওই পাঁচ গ্রামের মানুষ, আর ভাটায় সবকিছু ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে নদীতে ।

খোলপেটুয়ার লবন পানিতে গৃহহারাদের একজন প্রতাপনগর হওলাদার বাড়ি এলাকার কালাম ঘোরামী ৫ সন্তানের জনক। সর্বস্ব হারিয়েছেন, কোথায় যাবেন, কি করবেন কিছুই জানে না। আক্ষেপ করে বললেন, তিন পুরুষ ধরে বাসবাস করছি এখানে। রিং বাঁধ ভেঙ্গে সবকিছু তলিয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব জানিনা। কালাম ঘোরামীর অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে এভাবেই এলাকা ছাড়ছে।

গত শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরের জোয়ারের সময় প্রতাপনগর মানিক হাওলাদারের বাড়ির উত্তর পাশের বিকল্প রিং বাঁধে প্রথমে সামান্য ঘোগা হয়। পরে ওই ঘোগাটি বড় আকার ধারণ করে। এসময় খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রায় ৫০ ফুট এলাকা জুড়ে বিকল্প রিং বাঁধটি ভেঙ্গে প্রতাপনগর ইউনিয়নের পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলাগামী প্রধান সড়কের চলমান সংস্কার কাজটি ¯্রােতের টানে আবারও বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছে ওই এলাকায় থাকা মসজিদটি। এখানকার কিছু পরিবারের ভিটামাটি চলে গেছে নদী গর্ভে। ভাঙ্গনকবলিত বিকল্প রিং বাঁধটি গত চারদিন ধরে মেরামত না হওয়ায় ওই এলাকায় জোয়ারভাটা অব্যহত রয়েছে। পাঁচ গ্রামের প্রায় ৪/৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফলে গ্রহহারা অনেকই বাব দাদার রেখে যাওয়া বসত ভিটা ফেলে অন্যত্রে চলে যাওয়ার জন্য নৌকায় তাদের মালামাল তুলছেন।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, ঘর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রতাপনগর ইউনিয়নের বন্যাতলা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। বাঁধটি এখনো সংষ্কার করা সম্ভব না হওয়ায় স্থানীয় গ্রাববাসীদের উদ্যোগে প্রতাপনগর গ্রামের সামনে দিয়ে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মান করা হয়। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের চাপে ৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় জব্বার মাষ্টারের বাড়ির সামনে থেকে বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। এসময় গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে দ্রুত ভাঙ্গন পয়েন্ট টি মেরামত করা হয়। দুপুরের জোয়ারের তোড়ে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পর প্রতাপনগর মানিক হাওলাদারের বাড়ির উত্তর পাশে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় বিকল্প রিং বাঁধটি সামান্য ভেঙ্গে যায়। কিন্তু রাতের জোয়ারে ভাঙ্গন পয়েন্টটি আরো বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় একশত ফুট রান্তা ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রতাপনগর তালতলা, মাদার বাডড়িয়া, কুড়িকাহনিয়া, কল্যাণপুর সহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার মধ্যে প্রতাপনগর পশ্চিম, মাদার বাড়িয়া গ্রামের কয়েক শ’ বিঘার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শ’ পরিবারের ঘর বসতবাড়ি। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। বাড়িঘর ডুবে থাকায় অনেকে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, বিকল্প রিং বাঁধটি ভাঙ্গার বিষয়টি আমি স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাঁধটি সংষ্কারে প্রয়োজনীয় কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে আগের মত জোয়ার ভাট হচ্ছে ওই এলাকায়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে প্রতাপনগরের মানুষের মাঝে নেমে আসে দুর্বিষহ দুর্ভোগ। কোনভাবেই যেন তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জনগণের জানমাল রক্ষায় দ্রুত বাঁধটি সংষ্কারের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!