সরকারি ২৬টি পাটকল বন্ধের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত চালু করা হয়নি। শ্রমিকরা দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। রাষ্ট্রীয় এই সম্পদকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাটকল রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। শুক্রবার (২ জুলাই) রাতে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে ‘অর্থনীতির কবল থেকে জাতীয় সম্পদ ও শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক অনলাইন মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তৃতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, খুলনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যে উন্নয়নের ঢোল পেটানো হচ্ছে সেই উন্নয়নের ঢোলে অনেকে আচ্ছন্ন। এখানে ভবন হচ্ছে, রাস্তা হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। সুন্দরবন বিনাশী তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। পাশাপাশি পাটকল বন্ধ করে দিয়ে হাজার-হাজার শ্রমিককে জীবিকার অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বলেছিল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কনসালট্যান্ট ও শ্রমিকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ভারতীয়দের বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পাটশিল্প ধ্বংস না করে সচল রাখলে এদেশে বিশাল কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব ছিল। এই বিশাল কর্মসংস্থান আরো সম্প্রসারণ করা সম্ভব। কারণ, পাটশিল্পে যে পরিমাণ উৎপাদন হয় এবং যে বিশাল সম্ভাবনা আছে তাতে পাটশিল্পকে কেন্দ্র করে একটা পরিবেশবান্ধব শিল্পের ভিত্তি তৈরি হতে পারে বাংলাদেশে এবং এটাই শিল্পের মূলভিত্তি তৈরি করে কর্মসংস্থানের এক বিশাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে একের পর এক কলমের খোঁচায় মানুষকে কর্মহীন-বেকার বানানো বা রাস্তায় ফেলে দেয়ার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। সেই কর্মসূচির মধ্যে বৃহৎ কর্মসূচি হচ্ছে পাটশিল্প। পাটশিল্প থেকে বদলী-স্থায়ী প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক ও পাটচাষী, চিনিশিল্প বন্ধ করার ফলে হাজার-হাজার শ্রমিকসহ আখচাষীদের কর্মহীন করা হয়েছে। পোশাকশিল্প থেকে ৩ লক্ষাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এভাবে সুবিধাবঞ্চিতদের কর্মসংস্থান নেই করে দেয়া হচ্ছে। বক্তারা বলেন, সরকারের ভ্রান্তনীতি, লুটপাট ও দুর্নীতির ফলাফলই হচ্ছে পাটকল ও পাটশিল্প বিনাশের মূল কারণ। লুটপাটের ফলেই পাটকলে লোকসান হচ্ছে। তাদের এই লোকসানের দায়ভার শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থে পাটকল বন্ধ করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্য পাটকলের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ লুটেরাদের হাতে তুলে দিতে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষীরা সর্বদা প্রস্তুত।
বক্তারা বলেন, পাটকল-চিনিকলসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ জনগণের মালিকানায় আনতে গেলে বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এরজন্য ফ্যাসিবাদী শক্তির উচ্ছেদ ঘটিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর অপরিহার্য। সভায় নেতৃবৃন্দ গণবিরোধী দুঃশাসকের বিরুদ্ধে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের জাতীয় মঞ্চ গঠনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহবায়ক এ্যাড. কুদরত-ই-খুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন (টিইউসি) কেন্দ্রীয় সভাপতি সহীদুল্লাহ চৌধুরী, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য এ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড. আ ফ ম মহসীন, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, কৃষকনেতা রফিকুজ্জামান লায়েক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমী, ইউসিএলবি’র খুলনা জেলা সম্পাদক ডাঃ সমরেশ রায়, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক গাজী নওশের আলী, ফুলতলা উপজেলা সিপিবি নেতা গাজী আফজাল হোসেন, বেলার নেতা নূর আলম শেখ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন খুলনা মহানগর সভাপতি আফজাল হোসেন রাজু।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইস্টার্ণ জুট মিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক খান, শ্রমিকনেতা অলিয়ার রহমান, যশোর জুট মিলের শ্রমিকনেতা শামসেদ আলম শমশের, প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকনেতা আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, ইলিয়াস হোসেন, সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিলের শ্রমিকনেতা শহীদুল ইসলাম, লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের শ্রমিকনেতা মোঃ ইউসুফ, ইউএমসি’র শ্রমিকনেতা রওশন আলী প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি