খুলনার পাইকগাছায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে অধিক জমিতে হয়েছে বোরো আবাদ। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ধান ক্ষেতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব তুলনামুলক বেশি হওয়াতে খানিকটা বাড়তি পরিচর্যা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সর্বস্তরের কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে বোরো আবাদের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে বাড়তি ১ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ সর্বোমোট ৫ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে উফশী জাতের ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ও ১ হাজার ৫৭২ একর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে।
উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ৯৪৫ হেক্টর, কপিলমুনি ইউনিয়নে ১ হাজার ৩০ হেক্টর, লতা ইউনিয়নে ১ হেক্টর, সোলাদানা ইউনিয়নে ১ হেক্টর, গদাইপুর ১ হাজার ২৪০ হেক্টর, রাড়ুলী ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৫ হেক্টর, চাঁদখালী ইউনিয়নে ১ হাজার ৯০ হেক্টর, দেলুটি ইউনিয়নে ৭০ হেক্টর, গড়ইখালী ইউনিয়নে ২০ হেক্টর ও পৌরসভায় ১৮০ হেক্টর জমিতেসহ উপজেলায় লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে সর্বোমোট ৫ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে কপিলমুনির কাশিমনগর এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। তাতে তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধানের বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
হরিঢালী ইউনিয়নের কৃষক আবদুল হান্নান বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধানও মোটামুটি ভালোই হয়েছে। এ বছর পোকা মাকড়ের উপদ্রব একটু বেশি। তার ৫ বিঘা জমি প্রস্তুত ও ধান রোপণ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১০০ মণ ধান পাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গদাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। আর তার বাড়ির পাশের পুরাইকাটি বিলে লবণ পানির চিংড়ি চাষ হতো। কিন্তু তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর চলতি মৌসুমে লবণ পানির চিংড়ি চাষ বন্ধ করে মিষ্টি পানিতে নিজে বোরো আবাদ করেছেন। পাশাপাশি অন্যান্য কৃষদেরকেও উদ্ভুদ্ধ করেছেন। ধান অনেক ভালো হয়েছে। আগামীতে আরও একটি বিলের লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করে কৃষকদের মিষ্টি পানিতে মাছ ও ধান সমন্বয় চাষে উদ্বুদ্ধ করবেন বলেও জানান তিনি।
গদাইপুর ইউনিয়ন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা ডল্টন রায় জানান, চলতি বোরো মৌসুমে গদাইপুর ইউনিয়নে লক্ষ মাত্রা ছাড়িয়ে বোরো আবাদ হয়েছে।আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধানের বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে বাড়তি ১ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের সরকারের নানা ধরনের প্রণোদনায় সারাদেশের ন্যায় পাইকগাছা উপজেলার কৃষকেরা চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে খানিকটা বাড়তি উৎসাহী হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সর্বশেষ চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধানের বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ এস আই