খুলনার পাইকগাছার সোলাদানা ইউপির বেতবুনিয়া থেকে পাটকেল পোতা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদার উপরের ৪ কিলোমিটার ইটের সোলিং রাস্তাটি বর্তমানে একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বিভিন্ন জায়গা থেকে ইট উঠে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন সংষ্কারের অভাবে মাটির গর্তগুলি স ম্প্রসারিত হয়ে পরিণত হয়েছে একেকটি মরণফাঁদে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের এ রাস্তাটি দিয়ে ভেকটমারী, পাটকেল পোতা, নারকেল তলাসহ ৩ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। তবে একাধিকবার বিভিন্ন মেয়াদে জনপ্রতিনিধিদের পট পরিবর্তন হলেও রাস্তাটির সংস্কারে এগিয়ে আসেনি কোন জনপ্রতিনিধি।
এব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে ভ্যাকটমারীর নূর হোসেন, হাকিম সানা, আব্দুল করিমসহ অনেকেই জানান, বেতবুনিয়া থেকে পাটকেল পোতা পর্যন্ত শিবসা নদীর কূল ঘেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদার উপরের ইটের সোলিং রাস্তাটির ইট উঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কোথাও কোথাও বড় গর্ত তৈরী হয়ে একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিবসা নদীর তীরবর্তী তাদের বসবাস। দীর্ঘ দিন যাবত রাস্তাটি খারাপ হয়ে পড়াতে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমনকি নিত্য পন্য বাড়িতে নিতেও তাদের পোহাতে হয় চরম বিড়ম্বনায়। ৪ কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ইট উঠে বড় বড় গর্তে পরিণত হওয়ায় সেখানে ভ্যান পর্যন্ত ঢুকতে চায় না। বেঁচে থাকতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিয়ে চাল,ডালসহ নিত্য পণ্য বাড়িতে পৌঁছাতে হয় তাদের।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী আরো জানান, গত ১৪ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রলয়ংকারী আইলা উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। ওই সময়ই মূলত নদীতে পানি স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা ছাপিয়ে ইটের সোলিং এর রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকে গত কয়েক বছরে জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তন হলেও ৩ গ্রামের মানুষদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির সংস্কারের বিষয়টি কারো নজরে আসেনি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সিদ্দিক শিকারী বলেন, আইলা, বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাটি কিছুটা সংস্কার করে চলাচল করা হলেও দীর্ঘদিন যাবত ৪ কিলোমিটার রাস্তা একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ওই এলাকায় একটি পতন আবাসন ও বঙ্গবন্ধু ইকো পার্ক থাকাতে সেখানে আসা দর্শনার্থীদের যানবাহন বেতবুনিয়া মোড়ে রেখে প্রায় দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয়। তাই সর্বসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী বলেন, তিনি মাত্র ৩ মাস আগে নির্বাচিত হয়ে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তবে ইতোমধ্যে পাটকেলপোতা ভ্যাকটমারীর বাসিন্দারা তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি অনুপযোগী হয়ে পড়ার বিষটি অবহিত করেছে। এমনকি তিন গ্রামের কোন মানুষ অসুস্থ্য হলে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলেও জানিয়েছে তারা। তবে বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিদের রাস্তাটি সংস্কার না করার বিষটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে রাস্তাটির সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও অবহিত করেছেন তিনি। সামনে বর্ষা মৌসুমের আগেই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ৪ কিঃ মিঃ রাস্তা আসলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও ইট উঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়ে মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সাংসদ মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুকে বিষটি জানিয়েছেন তিনি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।
সর্বশেষ বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে কোন রকম বাধ্য হয়ে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় প্রায় দশ হাজার মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকেনা। এমন পরিস্থিতিতে জরুরী ভিত্তিতে রাস্তাটি সংষ্কার পূর্বক দূর্ভোগ এড়াতে খুলনা-০৬ (পাইকগাছা- কয়রা) আসনের সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
খুলনা গেজেট/ টি আই