খুলনার পাইকগাছায় পৌর সদর থেকে শুরু করে উপজেলার সর্বত্র সকালের শুরু থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লাইসেন্স বিহীন অবৈধ যন্ত্রদানব নামে খ্যাত যানবাহনগুলো। প্রতিনিয়ত পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ট্রলির ব্যবহার এখন উজেলার সর্বত্র হারহামেশা দেখা যাচ্ছে।
লাইসেন্স বিহীন অদক্ষ চালক দ্বারা চলে এসকল যন্ত্রদানব। খুলনা-পাইকগাছা প্রধান সড়ক বা মফঃস্বল এলাকার রাস্তা গুলোতে এসকল অবৈধ যানবাহনের প্রশিক্ষিত চালক বিহীন যত্রতত্র চলাচলে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও বাড়ছে। তবে এসকল অবৈধ যন্ত্রদানব সড়ক-মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তা কার্যকরে প্রশাসনের তেমন কোন মাথাব্যথা নেই বললেও চলে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধান সড়কে এ সব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এগুলোর চলাচল দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ট্রলি ও ভটভটি চালক জানান, এই যানবাহনই তাদের উপার্জনের একমাত্র উপায়। তাছাড়া তারা ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক বা ওই ধরণের যানবাহনগুলোর মূল্য কয়েকগুন বেশি হওয়াতে তা কিনতে পারেননা তারা। অনেকেই আবার দিন চুক্তিতে ট্রলি ভাড়া নিয়ে সংসার চালাতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা চালাচ্ছেন বলে জানান। এ যানবাহন সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলের অনুমতি না থাকায় উভয় সঙ্কটের মধ্যে চলতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।
তারা আরও জানান, মাসিক চুক্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে স্থানীয় স্ট্যাটার বা মালিক সমিতির মাধ্যমে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়। ফলে বছরে দু একবার এ সকল যানবাহনগুলোর নিয়ন্ত্রণে অভিযান চললেও পরিচয় দিলে ছাড় পেয়ে যান তারা।
এদিকে এ সকল অবৈধ যানবাহনের কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় অন্যান্য যানবাহনগুলোকে।
পাইকগাছা-ঢাকা মহাসড়কের পরিবহন চালক আসাদুল ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে এর আগে ট্রাক চালাতেন। কয়েকমাস আগে থেকে তিনি পরিবহন চালাচ্ছেন। তবে পাইকগাছাসহ মহাসড়কে চলাচলকারী এসব অবৈধ ছোট বাহনগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এর শব্দ তীব্র হয়। আর কোনো লুকিং গ্লাসও থাকে না তাতে। এতে পেছন থেকে হর্ণ দেওয়া হলেও তারা বুঝতে পারে না। আবার সড়কের যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ করে ইউটার্ন নিয়ে বসে। এদের আবার তেমন কোন ব্রেকও নেই। এগুলোর চালকরাও আবার অদক্ষ। এসকল নানা কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বেশিই হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এব্যাপারে কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, বিশ্বের কোনো দেশেই সড়ক কিংবা মহাসড়কে এ ধরণের যান চলাচল করে না। প্রতিনিয়ত অননুমোদিত যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধিতে রাস্তায় শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। এগুলোর নির্গত কালো ধোঁয়া আবার পরিবেশ দূষণ করছে, অন্যদিকে এর উচ্চ শব্দে আবার শব্দ দূষণও হচ্ছে। অদক্ষ চালক ও ব্রেক বিহীন হওয়াতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে এগুরোর নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ইটভাটা ও টালির কারখানা রয়েছে। ট্রলিতে করে মাটি নিয়ে তারা ওই সকল ইটভাটা ও টালির কারখানাগুলোতে সরবরাহ করে। তারা প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যেকটি রাস্তাতেই বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। ট্রলি থেকে সড়কে মাটি পড়েও আবার অনেক সময় ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটে। আর গ্রামীন সড়কে এগুলোর বেপরোয়া গতির চলাচলে রাস্তাগুলোও দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান তারা। আর এগুলোর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না করা ও প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন তারা।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ মমতাজ বেগম বলেন, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে প্রধান সড়কে এ ধরণের যানবাহন চলাচল করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে যন্ত্রদানবগুলোর নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার সর্বস্তরের সচেতন মহল।
খুলনা গেজেট/ এস আই