লবণ পানির চিংড়ি অধ্যুষিত পাইকগাছায় ঘোষণা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা লবণ পানির উত্তোলন। সরকারি রাস্তা বা ওয়াপদার পাশে গড়ে ওঠা চিংড়ি ঘেরে বিকল্প বাঁধ প্রদানসহ কোন শর্তও মানছেননা অধিকাংশ এলাকার ঘের মালিকরা। মাছের পাশাপাশি ধান চাষের নিমিত্তে দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা জনমতও যেন কোন কাজে আসছেনা।
লবণ পানির বিরোধিতা করায় জমি মালিকদের অনেকে আটকা পড়ছেন কৌশলী ঘের মালিকদের আইনী বেড়াজালে। এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ পাইকগাছার গদাইপুর ও কপিলমুনি ইউনিয়নের নোয়ালতলা ও সুরনাল মৌজায় গড়ে ওঠা ৭ শ’ বিঘার একটি চিংড়ি ঘের ইস্যুতে দিন দিন ঘোলাটে পরিবেশ তৈরী হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট ঘেরের জমি মালিকদের বৃহদাংশ একজোট হয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর নিজেরা গণ ঘের ও ধান চাষের জন্য একটি আবেদন করেন। একই দিন ঘের মালিকদের পক্ষে একজন শেখ আনারুল ইসলাম ঘেরের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পাইকগাছা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারা মোতাবেক একটি মামলা করেন। যার নং-১৯/২২। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম গত ৮ ফেব্রুয়ারি সেখানে দখল ভিত্তিক স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন।
জমি মালিকরা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন যে, তারা পাইকগাছার মরহুম আলহাজ্ব ফসিয়ার রহমানের ছেলে ইসতিয়ার রহমান শুভকে বিশেষ শর্তে ডিড এগ্রিমেন্ট করেন। কিন্তু তিনি ডিডের চুক্তি ভঙ্গ করে শেখ আনারুল ইসলাম, নির্মল মজুমদার ও বিপ্লব সাধুকে ডিড হস্তান্তর করেন।
অভিযোগে তারা জমি মালিকদের ঠিকমত হারির টাকা পরিশোধ না করে দূর্ব্যবহার করছেন। এছাড়া তারা ঘের এরিয়ার মধ্যে সরকারি ওয়াপদার বাঁধ কেটে পানি সরবরাহের সুবিধার্থে ৬ টি গেট, কলগই ও পাইপ বসিয়ে লবণ পানি উত্তোলন করে ফসলের ক্ষতিসাধন করছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া সম্প্রতি ঘের মালিক শেখ আনারুল ইসলামসহ তার পার্টনারদের বিরুদ্ধে ঘের অভ্যন্তরের প্রায় পৌনে ১ কিঃমিঃ ওয়াপদার সিংহভাগ কর্তন করে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। যদিও আন্দোলনের মুখে তারা বাঁধের কেটে নেওয়া অংশে নরম কাঁদা দিয়ে ভরাট করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
ঘের মালিকদের মধ্যে শেখ আনারুল ইসলাম ও নির্মল মজুমদার বলেন, অর্থ সংকটে ইসতিয়ার রহমান তাদেরকে ঘেরের পার্টনার করেছেন। এছাড়া কোন জমির মালিক তাদের কাছে হারির টাকা পাবেননা এমনকি অনেকে অতিরিক্ত অগ্রিম টাকাও নিয়েছেন।
এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারী ২১’ তারা ডিড বুনিয়াদে গদাইপুর ও কপিলমুনি ইউনিয়নের নোয়ালতলা ও সুরনাল মৌজায় ৭শ’ বিঘার চিংড়ী ঘের মালিক ইসতিয়ার রহমান শুভ’র নিকট থেকে ৬ শ’বিঘা জমি বিঘা জমির যৌথ পার্টনারশীপ লিখে নেন শেখ আনারুল ইসলাম ও নির্মল মজুমদার। যার রেজিঃ ডিড অব পার্টনার শীপ দলিল নং ৫৮৭/২০২১।
তবে চলতি মৌশুমের শুরুতেই আন্দোলনের মুখে পাইকগাছায় লবণ পানি উত্তোলন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। খাদ্য ঘাটতিসহ নানা সংকট মোকাবেলায় জমি মালিকদের পক্ষে দাবি করা হয় মিষ্টি পানিতে মাছের পাশাপাশি ধান চাষ করতে চান তারা। উপজেলাব্যাপী অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিরাও তাদের সাথে একাট্ট হন। পক্ষে-বিপক্ষে দফায় দফায় মিটিং-সিটিং করে সরকারি রাস্তা বা ওয়াপদার অন্তত ১০ ফুট দুরত্বে বিকল্প বাঁধ নির্মাণসহ বেশ কিছু শর্ত-সাপেক্ষে কোন কোন এলাকায় ঘেরের পক্ষে অনুমতি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকায় রাস্তা বা ওয়াপদা ধারে বিকল্প বেড়ি-বাঁধ বাস্তবায়ন হয়নি। বন্ধ হয়নি পানি সরবরাহে বাঁধ কেটে পাইপ বা কলস্থাপন।
এরই মধ্যে গদাইপুর ও কপিলমুনি মৌজায় যৌথ মালিকনায় ৭ শ’বিঘার ঘেরটি নিয়ে শুরু হয়েছে মতদ্বন্দ্ব।
এ্যাপারে ঘের অভ্যন্তরের জমি-মালিকরা বলছেন, তারা কোন ঘের মালিকের কাজে বাঁধা দিচ্ছেননা। তারা শুধু জমির মালিক হিসেবে নিজেরাই ঘেরের পাশাপাশি ধান চাষের দাবি করছেন। এসময় তারা নিজেদের জমিতে ইচ্ছা মাফিক পরিকল্পিত কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত আদালতের আদেশের কপি হাতে পেয়েছেন। আদেশ অনুযায়ী পুলিশের পক্ষে সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস,ও রাজু হাওলাদার এবিষয়ে প্রথমত সরকারি বাঁধ কর্তনের বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও সর্বশেষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই