মানুষ মানুষের জন্য, জীবন তো জীবনেরই জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা! হ্যা সহানুভূতি পেতেই পারে। আর তাই ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত এ কালজয়ী গানটির কথা স্মরণ করিয়ে একজন সংকটাপন্ন হতদরিদ্র মানুষের সাহাযার্থে আমাদের এ মানবিক প্রতিবেদন।
মোঃ আব্দুল করিম (৪৮)। পাইকগাছার কপিলমুনি ইউনিয়নের সলুয়া গ্রামের মৃত আনছার সরদারের ছেলে। দারিদ্রতাকে নিত্য সঙ্গীকরে দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে নানা সংকটেও বেশ কাটছিল তার জীবন। তবে স্বল্প সুখই যেন সইলোনা তার।
জীবন সংগ্রামে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে টিকে থাকতে জীবিকার তাগিদে এখন থেকে প্রায় ৭ বছর পূর্বে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ। সেখানে বিভিন্ন এলাকায় গাছ ঝোড়ার (ডাল পালা কাটা) কাজ করতেন তিনি। এ কাজ করেই বেশ চলছিল তাদের। তবে হঠাত একদিন গাছ ঝোড়ার সময় উপর থেকে মাটিতে পড়ে গিয়ে তার মেরুদন্ড সহ হাত,পা ভেঙ্গে যায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আচমকা এ প্রলয়ংকারী ঝড় যেন তার সব স্বপ্নই ধূলিস্যাত করে দিল। ভেঙে গেল তার হাজারো স্বপ্ন।
এরপর ঢাকাস্থ একটি হাসপাতালে দীর্ঘ প্রায় দু’ বছর চিকিৎসাধীন থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে কোন রকম প্রাণে বেঁচে গেলেও একেবারেই নিঃস্ব হয়ে যার গোটা পরিবার। তবে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ডাক্তার জানায়, সে কোন কাজকর্ম করা তো দূরে থাক আর কখনো দাঁড়ানো এমনকি ঠিকমত বসতেই পারবেনা।
এর পর এক প্রকার জীবিত লাশের মতই বাড়ি ফিরে আসে সে। কিছুদিন পর আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়রা তার দুর্দশার বিবেচনা করে সকলে মিলে তাকে একটি ব্যাটারি চালিত গাড়ি তৈরী করে দেয়। যাতে করে সে কোন রকম বাড়ির আশপাশে চলে বেড়াতে পারে। তবে মাস ছয়েক আগে তার সেই চলাচলের একমাত্র বাহনটির ব্যাটারি ও মোটর দুটোই অকেজো হয়ে গিয়েছে। যা সারাতে প্রয়োজন প্রায় ২০ হাজার টাকা।
প্রতিবেদনকালে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্না বিজড়িত চোখে করিম এ প্রতিবেদককে জানায়, কয়েক বছর আগের একটি দুর্ঘটনায় সে কোন রকম মরার মতই প্রাণে বেঁচে রয়েছে। আর দুর্ঘটনার পর তারা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। স্বজনদের কারও তেমন অবস্থাও নেই। ঠিক মত সংসারটাই চলে না। তার ওপর নিত্য ওষুধ খেতে হয়। সব মিলিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয় তাদের। তার অবস্থার কথা বিবেচনা করে সকলে মিলে তাকে একটি ব্যাটারি চালিত বিশেষ বাহন তৈরি করে দিয়েছিল। সেটাও প্রায় ছ’মাস আগে অকেজো হয়ে গিয়েছে। তার খুব মন চায় শত অসুস্থতার মাঝেও আশপাশের সকলকে দেখতে। অন্তত বাড়ির পশের রাস্তার ধারে গিয়ে দিনের কিছুটা সময় কাটাতে পারলেও তার মনের অসুখটা কিছুটা কমতো। এমনটাই জানায় সে। তবে তার দ্বারা প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করা কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই সম্ভব হলে তার সহযোগিতায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আবদার রেখেছে সে।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্থাফিজুর রহমান মিন্টু তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, করিম আসলেই খুব দুরবস্থার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে। আপাতত সকলের সহযোগিতার ওই বিশেষ হুইল চেয়ারটি ঠিক করতে পারলেও তাকে আর ওই ভাবে শুয়ে থাকতে হতো না। অন্তত দিনের কিছুটা সময় সে আশপাশে ঘুরে বেড়াতে পারত। তাতে নানা সংকটেও মনের দিকদিয়ে সে কিছুটা সবল হতো। আর তাই করিমের সহযোগিতায় যতটুকু সম্বভ সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ এস আই