খুলনার পাইকগাছায় চাঞ্চল্যকর তাজমিরা খাতুন (৩৮) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। রবিবার ৩দিনের রিমান্ড শেষে আদালেত মীর শহিদুল্লাহ (স্বামীর ভাই) হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির পর পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, ছুরিসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করেছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হত্যার শিকার হন তাজমিরা।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ভোরে উপজেলার চাঁদখালীর ধামরাইল বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে ধান ক্ষেত থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন পুলিশ এ ঘটনায় স্বামী মীর ওবায়দুল্লাহ ও সেঝ ভাসুর মীর শহিদুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ তাজমিরার স্বামীকে ছেড়ে দিলেও পুলিশ নিহতের ভাসুর মীর শহীদুল্লাহকে বুধবার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণের জন্য আদালতে পাঠায়। ওইদিন নিহতের ভাই উপজেলার মৌখালীর আলমগীর গাজী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-৩২। তারিখ-৩১/১/২৩।
পুলিশ জানায়, ৩০ জানুয়ারি রাতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে উপজেলার চাঁদখালীর ধামরাইলের ওবায়দুল্লাহ মীরের স্ত্রী ও ৩ কন্যা সন্তানের জননী গৃহবধূ তাজমীরা (৩৮) খাতুন ওরফে ববিতাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যান ভাসুর মীর শহিদুল্লাহ। তিনি কৌশলে চায়ের দোকানের মধ্যে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে তোজমিরাকে হত্যা করে। সে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে বাড়ির ৫০ গজ দূরে নিজেদের ধান ক্ষেতের আইলে লাশ ফেলে রাখে।
জানাগেছে, ২০১৮ সালে নিহতের স্বামী ওবায়দুল্লাহ মীরের সাথে তার বড় ভাই মৃত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ মীরের ছেলে খুলনার বাসিন্দা ইমন ও মেয়ে মৌসুমীর মধ্যে ৭ শতক জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ইমন ও মৌসুমী দু ভাই বোন চাচা কামরুল মীরের কাছে ওই বিরোধপূর্ণ জমি বিক্রয় করলে ত্রি-মুখি বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে বহুবার স্থানীয় সালিশীতে মীমাংসা না হলে সর্বশেষ ওবায়দুল্লাহ ও কামরুল মীর পাইকগাছার নির্বাহী কোর্টে পাল্টা-পাল্টি ১৪৪ ধারার মামলা করলে পুলিশ দু’পক্ষকে নোটিশ করে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনজীর হোসেন জানান, জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে তৃতীয় পক্ষ তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চাচা কামরুল মীর ও ইমন-মৌসুমী দু’ ভাই-বোনকে ফাঁসাতে ওবায়দুল্লাহর সেঝভাই চা দোকানি শহিদুল্লাহ মীরসহ কয়েকজন মিলে ওবায়দুল্লাহর স্ত্রী তাজমিরাকে খুঁনের পরিকল্পনা করে ।
পরিকল্পনা অনুযায়ি ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জমি বুঝে দেবার কথা বলে ভাসুর শহিদুল্লাহ গৃহবধূ তাজমিরাকে তার চায়ের দোকানে ডেকে নেয়। রাতে খাবার খেয়ে স্বামী ওবায়দুল্লাহ এক রুমে ও মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে অন্যরুমে তাজমিরা ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর রাত ১২ টার দিকে তাজমিরাকে ভাসুর শহিদুল্লাহ পুনরায় নিজের চায়ের দোকানে ডেকে নেন। এরপর দোকানের দরজা বন্ধ করে ভাসুরসহ কয়েকজন মিলে তাজমিরার গলায় গামছা পেচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ধান ক্ষেতের আইলে নিয়ে ঘাড়ে ছুরি আঘাত করে লাশ সেখানেই ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরের দিন ৩১ জানুয়ারি সকালে লাশ পড়ে থাকার খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মৌখালীর আলমগীর গাজী বাদী হয়ে ওইু দিনই অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন,যার নং-৩২।
পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, চাঞ্চল্যকর তাজমিরা হত্যা মামলায় স্বামী মীর ওবায়দুল্লাহর বড় ভাই শহিদুল্লাহর স্বীকারোক্তি অনুযায়ি হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/ এসজেড