খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  হাইকোর্টে ২৩ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ, আজ শপথ
সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

মনির বিড়ি’র ব্যান্ডরোল নকল প্রমাণিত, ৩ মাসেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

খুলনার পাইকগাছায় নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত মনির বিড়ির চালান আটকের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রস্তুতকারী কোম্পানীর মালিক কিংবা সংশ্লিষ্টদের কাউকে আইনের আওতায় নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ঘটনায় থানায় দাখিলকৃত এজাহারটিও রেকর্ড হয়নি। সর্বশেষ ইউএনও’র তাগিদপত্রও আমলে নিচ্ছেননা অভিযুক্তদের কেউ। সর্বোপরি সরকারি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনাটিকে আড়াল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও প্রশ্ন উঠেছে।

গত বছরের ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল পৌর সদরের ইজিবাইক স্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৮ বস্তা (৩ লক্ষ ৩৬ হাজার পিচ) নকল মনির বিড়ি জব্দ করেন। একই সময় যশোরের মনিরামপুর থানার চন্ডিপুর এলাকার মো: আলী হোসেন বিশ্বাসের ছেলে মো: রফিকুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করা হয়।

ঐদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিড়িগুলো জব্দ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট নিলে এর সাথে জড়িত বিড়ির সাব ডিলার পাইকগাছার সোলাদানার আব্দুর রউফ বিশ্বাস উপস্থিত হয়ে নিজেকে কোম্পনীর সাব ডিলার দাবি করে জব্দকৃত সমুদয় বিড়ি তার অনুকূলে নেন। যার রশিদ নং-৩৬৪। এসময় কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি রেজোওয়ান ইসলাম রনি ও মো: শরিফুল ইসলাম তাদের আমদানিকৃত সমুদয় বিড়ির প্যাকেটে ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল আসল বলে দাবি করে করেন। কোম্পানী সরকারকে যথাযথ রাজস্ব দেয় বলেও জানান তারা।

এসময় জব্দকৃত বিড়িগুলি পরীক্ষিত ফলাফলের ভিত্তিতে আইনানুগ যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণের শর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) এর মৌখিক নির্দেশে সাবডিলার উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের বয়ারঝাপা গ্রামের  আব্দুর রউফ বিশ্বাসের জিম্মায় রাখা হয়।

পরবর্তীতে উদয় কুমার মন্ডল মনির বিড়ির ৪টি নমুনা প্যাকেট পরীক্ষার জন্য দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে প্রেরণ করেন।দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ এর অরিজিনেশন, গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ খশরুজ্জামান স্বাক্ষরিত গেল বছরের ৮ নভেম্বর পত্র নং ৫৩. ১৮. ৩৩০০. ০৩৮.১৬.১৩৪.২০২১-১৩৪ মাধ্যমে উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টরকে জানানো হয় যে, তাদের কাছে পাঠানো মনির বিড়ির ৪ টি প্যাকেটে লাগানো ব্যান্ডরোলগুলো নকল।

সর্বশেষ অরিজিনেশন, গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পাঠানো তথ্যর ভিত্তিতে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম গেল বছরের ২৪ নভেম্বর জব্দকৃত বিড়িগুলি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরৎ দেওয়ার জন্য জিম্মাদার আব্দুর রউফ বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন। অথচ নির্দেশনার ২ মাস ১১ দিন অতিবাহিত হলেও আব্দুর রউফ বিশ্বাস বিড়িগুলি ফেরৎ দেননি। কিংবা থানা পুলিশ স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের দাখিলকৃত এজাহারটি রেকর্ড করেননি।

এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল জানান, তিনি ১৮৬০ এর ২৫৫ এবং ২৬০ ধারায় মনির বিড়ি কোম্পানীর মালিক যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চন্ডিপুর ঘিবা গ্রামের মোঃ জামসেদ আলীর ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ জনের বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় একটি এজাহার দাখিল করলেও এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে তা রেকর্ড করা হয়নি।

এব্যাপারে পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউর রহমান জানান, প্রথমত এজাহারে কিছু ত্রুটি থাকায় তিনি তা সংশোধনী দিতে ইন্সপেক্টর উদয় কুমার মন্ডলকে বলেন। পরে তার সংশোধনী দিতে বিলম্ব হওয়ায় মামলা রেকর্ড হয়নি। এছাড়া বিড়িগুলো পর্যায়ক্রমে জমা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। যদিও স্যানিটারী কর্মকর্তা বলছেন ভিন্ন কথা। বিড়িগুলো জমাদানের ব্যাপারে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। তাছাড়া জব্দকৃত বিড়িগুলি বিক্রি করে পরে নতুন করে প্রস্তুতকৃত বিড়ি জমা দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ বলেও জানান তিনি।

এব্যাপারে মনির বিড়ি কোম্পানীর স্বত্ত্বাধিকারী মনিরুল ইসলামের কাছে জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে বারবার কল করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ট্যারিফ আইনে প্রতি প্যাকেট বিড়িতে ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলের সরকার নির্ধারিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ টাকা ০৯ পয়সা। সেক্ষেত্রে নামমাত্র বিড়িগুলো খরিদকৃত ব্যান্ডরোলের চেয়েও কমদামে বিড়ি বাজারজাত করছে। এরপরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অজ্ঞাত কারণে ঘটনাটিকে আড়াল করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে খুলনার গোপাল বিড়ি কোম্পানির ম্যানেজার গৌরপদ পাল বলেন, বাজারে যত্রতত্র বিভিন্ন ভুঁইফোড় কোম্পানীর নামে নিম্নমানের বিড়ি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে নাম মাত্র মূল্যে বাজারজাত করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি প্যাকেট ২৫ (শলাকা) বিড়ির দাম ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও নিন্মমানের কম দামের বিড়ি ৮/১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যেখানে বিড়ির প্যাকেটে ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল গুলোর সরকারের কাছ থেকে খরিদকৃত টাকার চেয়েও কমদামে বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে তারাও ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!