খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
  আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ফখরুল-রিজভী-আমির খসরু
  ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে রেণু হত্যা : একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন
  ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেল ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
  সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৩ বিচারপতি শপথ নিয়েছেন

পাইকগাছায় অবৈধ চুল্লিতে পুড়ছে কাঠ, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে লাখো মানুষ

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

খুলনার পাইকগাছা ও কয়রায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কয়লার চুল্লিতে প্রতিদিন অবাধে হাজার হাজার মণ কাঠ পুড়িয়ে প্রস্তুত হচ্ছে কয়লা। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদের লাখ লাখ মানুষ।

পাইকগাছার চাঁদখালী বাজার থেকে শুরু করে পার্শ্ববর্তী কয়রার নাকশা এলাকা পর্যন্ত অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অন্তত শতাধিক চুল্লির কোনটারই নেই বৈধ কোন কাগজ-পত্র। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা এসব চুল্লিতে প্রতিনিয়ত পুড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ কাঠ। এতে বন উজাড়ের পাশাপাশি সেখান থেকে নির্গত দূষিত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। স্থানীরা শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ বায়ুদূষিত নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

অভিযোগের খবরে সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদীর পাড়, প্রধান সড়ক ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব চুল্লি স্থাপনে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। কারখানার পাশ দিয়ে চলাচল করতে পথচারীদের সর্বক্ষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রকাশ্য দিবালোকে কাঠ পোড়ানোয় অবিরাম নির্গত দূষিত ধোঁয়ায় শ্বাস নেওয়া রীতিমত দূরুহ হয়ে পড়েছে। নিকটবর্তী এলাকায় বসবাসরতরা জানান, ইতোমধ্যে তারা শ্বাসকষ্টসহ বায়ুদূষিত নানা সমস্যায় ভূগছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত কাঠের যোগান দিতে হয়। সে হিসেবে শতাধিক চুল্লিতে প্রতিবার কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর প্রতিমাসে প্রতিটি চুল্লিতে তিন থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করতে ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ মণ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ বৃক্ষ নিধন হচ্ছে। সরকার বৃক্ষ নিধন রোধে বিভিন্ন সময় কঠোর আইন প্রনয়ন করলেও চুল্লি গুলোর দিকে তাকালে মনে হয় তারা যেন বৃক্ষ নিধনে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা নিয়মিত উপজেলা প্রশাসন কিংবা বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার দাবি জানান।

চলতি মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব চুল্লির কাঠের চাহিদাও বেড়েছে অতিতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। আর চাহিদা ও লাভের বিষয়টিকে পুঁজি করে বৃক্ষ নিধনে মেতে উঠেছে চুল্লি মালিকরা।

সূত্র জানায়, প্রভাবশালী এসব চুল্লি মালিকরা স্থানীয় সকলকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর পরিবেশ ধ্বংশ করলেও বিষয়টি নিয়ে যেন মাথা ব্যাথা নেই কারো।

সূত্র জানায়, পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নে চুল্লি ব্যবসা পরিচালনায় রয়েছেন, ধামরাইলের জনৈক আইয়ুব ও তার পার্টনার, ফতেপুরের জিল্লু ও তার পার্টনার। চাাঁদখালী বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে সারিবদ্ধভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ চুল্লি পরিচালনায় রয়েছেন, জনৈক মিন্টু, মিঠু, দিপু, জিয়া, লাচু, হাবিব, ইউপি সদস্য খোকন, সাঈদ, শাহাদাতসহ আরও অনেকে। পাইকগাছার চাঁদখালীর সীমান্তবর্তী কয়রা উপজেলায় নকশা এলাকার চুল্লি পরিচালনা করছেন জনৈক মোঃ ইকরামিনসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ এসব চুল্লি মালিকদের আবার সংগঠনও রয়েছে। মূলত সংগঠনের ছায়াতলে এক প্রকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় এয় এসব চুল্লি। এমনকি স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করতে এসব সংগঠনই মুখ্য ভূমিকা রাখে বলেও জানানো হয়।

চুল্লি মালিকদের একজন জিল্লু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদের সংগঠনই মূলত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

এসব চুল্লি পরিচালনায় বৈধ কোন অনুমোদন বা লাইসেন্স আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাদের কোনো লাইসেন্স লাগে না, তাদের কমিটিই বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা বা সংকট মোকাবেলা করে থাকে।

এসব চুল্লির বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন বা বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছর দু’একবার খুলনা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা অভিযানে আসলেও আগে থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে যান তারা। এর প্রেক্ষিতে সাময়িক বন্ধ রাখা হয় এসব চুল্লি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এক প্রকার অবাধে তারা এ চুল্লির ব্যবসা পরিচালনা করলেও প্রশাসনের পক্ষে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। বিরুদ্ধাচারণ করলে নানাভাবে তাকে হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়।

এব্যাপারে চাঁদখালীর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু ইলিয়াস জানান, তিনি সদ্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিষয়টির ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।

এব্যাপারে উপজেলা সেনিট্যারী ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল জানান, কাঠ পোড়ানোর ফলে কার্বন ও সীসা উৎপন্ন হয়ে তা বাতাসে মিশে যায়। যে এলাকায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করা হয়, ওই এলাকায় চুল্লির ধোঁয়ায় মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, চোখের সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে বলেও জানান তিনি।

পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কোন অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। দ্রুতই তদন্তপূর্বক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান জানান, এ ধরণের অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। চাঁদখালী ও নাকশা এলাকাতেও অবৈধ চুল্লির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!