সাত মাস বন্ধের পর বিশ্ব ঐতিহ্যের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে প্রবেশাধিকার নিশ্চয়ই পর্যটকদের জন্য সুখবর। সেও যদি হয় করোনাকালীন গৃহবন্দী দশার পর, তাহলে তো ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দের বাঁধ ভাঙতেই পারে। হ্যাঁ, অপেক্ষার পালা শেষ। আসছে নভেম্বরের শুরুতেই মহান স্রষ্টার অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যের অপরূপ সৃষ্টি সুন্দরবনের দ্বার খুলছে পর্যটকদের জন্য। প্রি-বুকিংও শেষ পর্যায়ে ট্যুর অপারেটরগুলোর। ফলে দীর্ঘদিন পর প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরছে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পে।
সম্প্রতি বন ও পরিবেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সুন্দরবনকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেবার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রেঞ্জ ও বিভাগীয় পর্যায়ে দু/একদিনের মধ্যেই অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। আসছে শীত, পর্যটনের সেরা মৌসুম। পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার খুলনা গেজেটকে বলেছেন, আজ/কালকের মধ্যেই সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বনবিভাগ। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি তো ইতোমধ্যেই মৌখিকভাবে অনেককেই বলে দিয়েছি। ট্যুর অপারেটরদেরও প্রস্তুতি নিতে বলেছি। কোন অসুবিধা নেই।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একটি জাহাজে ৫০ জনের বেশি যাওয়া যাবে না। শারিরিক ও সামাজিক সুরক্ষা দুরত্ব বজায় রেখেই সরকারি সকল স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ট্যুর অপরারেটর ও পর্যটকদের।
খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটন শিল্প বলতে বিশ্বখ্যাত নয়নাভিরাম সুন্দরবনকেই বোঝায়। সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পে লক্ষাধিক মানুষের রুটিরুজি জড়িত। সারাবছর দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে সুন্দরবন উপকূল। তবে বর্ষার পরই সাধারণত সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম শুরু। সে হিসেবে এখনই সময় প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগের।
বনবিভাগের সূত্রমতে, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে গত ১৯ মার্চ পুরো সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন জুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার নির্দেশনা ছিল। সুন্দরবনের নয়টি পর্যটন এলাকায় পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চে) কোনো কোনো দিন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান করেন। ফলে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে থাকা দর্শনার্থীরা। চরম আর্থিক হুমকির মুখে পড়েছিল ট্যুর অপারেটর ও সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এখন পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তারা। দেখছেন আশার আলো।
সরকার, বন উপমন্ত্রী ও বনবিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সভাপতি মোঃ মইনুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, ইতোমধ্যে বুকিং নিয়েছি। অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো। সে জন্য জাহাজে পর্যটক সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছি। করোনায় গৃহবন্দী মানুষের অবসাদ কাটাতে অবারিত সবুজের সমারহে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে সুন্দরবন।
পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বশির আল মামুন এবং পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, বন অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দু/একদিনের মধ্যে নির্দেশনা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে সুন্দরবনের পর্যটন খাত থেকে কোনো রাজস্ব আয় হয়নি। তবে গেল অর্থবছরে (২০২০-১৯) পূর্বে এক কোটি ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮ টাকা এবং পশ্চিমে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল।
খুলনা গেজেট/এআইএন/এমএম