মহাজন চাষী এখন আর তিন বেলা খাওয়া দেয় না। বিড়ি-তামাক দেয়না। কৃষি শ্রমিকের প্রতিদিনের শ্রমঘন্টা সকাল ৮টা-বিকাল ৪টা। গেল বোরো মৌসুমে প্রতিদিনের কৃষি শ্রমিকের মজুরী ৫৬০ টাকা, এবারে ৪৫০ টাকা। পরিসংখ্যান ব্যুরো, খুলনা জেলার গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। জরীপ প্রসঙ্গে দাকোপ, ডুমুরিয়া ও তেরখাদার মহাজন চাষীদের ভাষ্য তৃণমূলের চিত্র একেবারেই উল্টো।
পরিসংখ্যান ব্যুরো, খুলনা কার্যালয় প্রতিবছরই কৃষি শ্রমিকের মজুরের ওপর জরীপ করে থাকে। এজন্য জেলার ৮০টি নির্বাচিত এলাকা তারা বেছে নিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে তাদের কর্মীরা জরীপ কাজে নিয়োজিত থাকে।
জরীপ প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাজন চাষী এখন আর কৃষি শ্রমিকদের তিন বেলা খাওয়া দেয় না। মহাজনের বেঁধে দেওয়া কৃষি শ্রমিকের দৈনিক শ্রম দান ৮ ঘন্টার। গেল বোরো মৌসুমে ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী পুরুষের ক্ষেত্রে ৫৬০ টাকা, মহিলার জন্য ৪৫০ টাকা, পাইকগাছায় পুরুষ ৪৭০ টাকা, মহিলা ৪৫০ টাকা, ফুলতলায় পুরুষ ৫৫০ টাকা, মহিলা ৪০০ টাকা এবং কয়রায় পুরুষ ৪৫০ টাকা এবং মহিলা ৩৫০ টাকা। এবারে ডুমুরিয়ায় পুরুষ ৪৫০ টাকা এবং মহিলা ৩০০ টাকা, পাইকগাছায় পুরুষ ৩৮৭ টাকা এবং মহিলা ৩০০ টাকা, ফুলতলায় পুরুষ ৪৫০ টাকা, মহিলা ৩৫০ টাকা এবং কয়রা উপজেলা পুরুষ ৫০০ টাকা, মহিলা ৪০০ টাকা। এবারের অক্টোবর-নভেম্বরে অন্যান্য উপজেলায় দৈনিক কৃষি মজুরী পুরুষ ৩৫০ টাকা-৫০০ টাকা এবং মহিলা ২৮০ টাকা – ৪০০ টাকা।
স্থানীয় সূত্র বলেছেন, মধ্য নভেম্বর থেকে বেরো আবাদের লক্ষে বীজতলা তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। রোপন চলবে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত। ডুমুরিয়া উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা বিমল কৃষ্ণ সরকার জনান, উপজেলার কয়েকটি গ্রামে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একজন কৃষি শ্রমিকের মজুরী ৩০০ টাকা। জানুয়ারিতে বোরো রোপনে ধুম পড়বে। শ্রমিকের পারিশ্রমিক জনপ্রতি ৫০ টাকা বাড়তে পারে। উপজেলা সদর ও কৈয়ায় শ্রম বিক্রির হাট বসবে।
অন্য সূত্র বলেছেন, চালনা বাজার ও নলিয়ানেও শ্রম বিক্রির হাট বসে। দাকোপ উপজেলার বাজুয়া গ্রামের মহাজন চাষী পঙ্কজ কয়াল জানান, আমন ধান কাটার মৌসুমে ক্ষেত্র বিশেষ চুক্তির ভিত্তিতে কৃষি শ্রমিককে তিন বেলা খেতে দিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একজন কৃষি শ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরী ৫০০ টাকা। যারা মহাজনের কাছ থেকে খাওয়া পায়না তাদের প্রতিদিনের পারিশ্রমিক ৬০০ টাকা। তিনি বলেছেন, গেল বোরো মৌসুমে সকাল ৭টা থেকে ৫টা পর্যন্ত একজন শ্রমিকের মজুরী ছিল ৪৫০টাকা। এবারের বীজতলাতেই প্রতিদিনের মজুরী দিতে হচেছ ৫৫০ টাকা।
ডুমুরিয়া থুকড়া গ্রামের রমজান মোল্লার ভাষ্য, গেল মৌসুতের তুলনায় এবার কৃষি শ্রমিকের মজুরী বাড়বে। তেরখাদা উপজেলার পশ্চিম শেখপুরা গ্রামের মহাজন চাষী রমজান মোল্লা জানান, আমন কাটা মৌসুমে ফজরের আজান থেকে মাগরিব পর্যন্ত তিনবেলা খাওয়াসহ কৃষি শ্রমিক ৬০০ টাকা। আবার খাওয়া বাদে একজন শ্রমিকের মজুরী ৮০০ টাকা। একই উপজেলার ১১ আমতলা গ্রামের রেজাউল শেখ জানান, গেল মৌসুমে ৪জন শ্রমিক এক বিঘা জমিতে বোরো রোপন করে। প্রতিজনের মজুরী ছিল ৫০০ টাকা। এবার বীজতলাতেই কৃষি শ্রমিকের মজুরী বেরেছে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বোরো আবাদের খরচ বাড়বে।
খুলনা গেজেট/এএ