ছায়েদুল হক শাহীন, সরকারি চাকুরিজীবী। সময় স্বল্পতার কারণে তিনি বাজারে যান অফিস সময়ের পর। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় খুলনার সান্ধ্য বাজারে দেখা হয়। তিনি বাজার থেকে কয়েক পদের তরকারি ও মাছ কিনেছেন। হাতে ব্যাগের বদলে পলিথিন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন কেন? উত্তরে তিনি জানালেন, বাজারে পলিথিন ছাড়া বহনের অন্য কোন কিছু পাওয়া যায় না।
বুধবার খুলনা মিস্ত্রীপাড়া বাজারে কথা হয় চাল ব্যবসায়ী জাকির আলীর সাথে। তিনি পলিথিন ব্যবহারের খারাপ দিক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। তবে তিনি বলেন, পলিথিন পচনশীল নয়। অথচ এটি পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা যদি তিনি জানতেন তাহলে হয়তো ব্যবহারই করতেন না। বাজারের প্রত্যেকটা দোকানে এখন পলিথিন আর পলিথিন। নিষেধ বা ঠেকানোর যেন কেউ নেই!
বাজারের প্রতিটা পণ্যই পলিথিনের আবরণে আবৃত। চকলেটের খোসা থেকে শুরু করে চেয়ার টেবিল পর্যন্ত বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে। দিনকে দিন এর উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
পরিবেশের ক্ষতির দিক বিবেচনা করে ২০০২ সালের প্রথম দিকে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় এর বিকল্প হিসেবে কাগজের প্যাকেট ও পাটব্যাগের ব্যবহার বেড়েছিল। তবে একেবারে থামেনি পলিথিনের ব্যবহার।
প্রতিদিন কী পরিমাণ পলিথিন উৎপাদন, ব্যবহার বা বর্জ্য হিসেবে জমা হয় এর কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা হিসাব পাওয়া যায়নি।
আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও বাজারে এর ব্যবহার চলছে দেদারছে। খুলনার কয়েকটি দোকান ঘুরে এর যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বড়বাজার, দোলখোলা বাজার, সান্ধ্যবাজার, মিস্ত্রীপাড়া বাজারে প্রতিটা দোকানে পাটজাত মোড়কের বদলে প্লাস্টিক বা পলিথিনের প্যাকেটে আটা, ময়দা, সুজি, চিনি, ডাল, চাল বাজারজাত করা হচ্ছে। তবে কিছু দোকানে চালের ক্ষেত্রে পাটের বস্তার ব্যবহার দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী ক্ষোভের সাথে জানালেন, পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু পলিথিন রিসাইকেলের কোন সিস্টেম নেই। এটা যেখানে সেখানে ফেলা হয়। এটি পচনশীল নয়, মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। তিনি এর বিকল্প হিসেবে অন্য পণ্য বাজারে সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন।
অপরদিকে, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল খুলনা গেজেটকে বলেন, গত বছরের শুরুতে হাইকোর্ট একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন বা প্লাষ্টিকের তৈরী জিনিসের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেসময় খুলনাসহ সারাদেশে পলিথিন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাষ্টিকের তৈরী জিনিষের ব্যবহার তেমন একটা ছিল না । কিন্তু বর্তমানে এর ব্যবহার দেদারছে হচ্ছে। তখন উচ্চ আদালতের আদেশ চিঠি আকারে খুলনার কয়েকটি হোটেলে পাঠানোও হয়, কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি। তাছাড়া পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য এ সকল পণ্য পচনশীল নয়। এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা হয়। এগুলো ড্রেনের পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, আর অল্প বৃষ্টিতে নগরীরর রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকতে হবে। এটার ব্যবহার বন্ধের জন্য শুধু বাজারে অভিযান চালিয়ে কোন লাভ হবে না। মূল উৎস পলিথিনের কারখানা খুুঁজে বের করে, তা বন্ধ করতে হবে। একই সাথে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি