খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরে জাহাজে ৭ জনকে হত্যা: আসামি ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে
নতুন দিগন্তের সূচনা হবে ব্যবসা বাণিজ্যে

পদ্মাসেতু চালুতে ভোমরা হবে আমদানি-রপ্তানির সিংহদ্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। উদ্বোধনের পরই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। এই সেতু ঘিরেই সোনালী ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন দেশের দক্ষিণের সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরার মানুষ। পদ্মাসেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও গতি বেড়ে যাবে, জেলায় গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান।

সাতক্ষীরার নাগরিক নেতা অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, পদ্মাসেতু আমাদের দক্ষিণ বঙ্গের জন্য একটি স্বপ্নের সেতু। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও শুধুমাত্র অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আমরা সবদিক থেকে পিছিয়ে আছি। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর সাতক্ষীরা জেলার ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। বাড়বে ভোমরা বন্দরের পণ্য পরিবহনের সুবিধা। জেলায় গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা ও পর্যটন কেন্দ্র। বাড়বে কর্মসংস্থান। দ্বিগুণ হবে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব আদায়। রাজধানী ঢাকায় যেতে ১০/১২ ঘন্টার রাস্তা কমে আসবে মাত্র ৫ ঘন্টায়। ভোগান্তি কমবে সাধারণ মানুষের। পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাবেক আহবায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর হবে দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের আমদানি-রপ্তানির সিংহদ্বার। ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সাথে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব বেনাপোল, সোনামসজিদ, হিলি, বুড়িমারী এবং বাংলাবান্ধা বন্দরসহ অন্য যে কোনো বন্দর অপেক্ষা অনেক কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুবিধা বোধ করেন। পদ্ম সেতু চালু হলে ভোমরা বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে অনেক কম সময় লাগবে। ফলে পণ্য সহজে ও কম সময়ে দেশের যে কোন প্রান্তে পৌছে যাবে। এতে আমদানি ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। ফলে ব্যবসায়িরা অনেক সুবিধা পাবেন।

তিনি আরও বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরে এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ভোমরা শুল্ক স্টেশন দেশের সকল শুল্ক স্টেশনের থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ করছে। কিন্তু প্রয়োজনী অনেক সুযোগ সুবিধার অভাবের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে খরচ বেশি হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ি প্রায়ই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হন। পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দরের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ফলে এই বন্দরের রাজস্ব আহরণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। যা প্রত্যক্ষভাবে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

সাতক্ষীরার বিনেরপোতাস্থ চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দীপা সী ফুডস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীনবন্ধু মিত্র বলেন, দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত চিংড়ি। যার অধিকাংশ খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই আয় আরও বাড়বে। পাশাপাশি কমে যাবে পণ্য পরিবহণেরও খরচ। একই সাথে অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন, সাধারণ মানুষের যাতায়াতসহ পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্যের এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হবে।

সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততম হবে। এতে সময় ও যাতায়াত খরচ কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ অঞ্চল থেকে দেশের দূর-দূরান্তে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরাও দারুণভাবে উপকৃত হবেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যুগান্তকারী উন্নয়ন হবে। এ অঞ্চলের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের গতি আসবে, আয় বৈষম্যও কমে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দরের সাথে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়বে।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরা থেকে একটি পরবিহন ঢাকায় যেতে এখন ১০ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লেগে যায়। যানজটের কারনে অনেক সময় ফেরি ঘাটেই ১৫/২০ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। একই সাথে ভোমরা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক দিনের পর দিন আটক পড়ে থাকে ফেরি ঘাটে। এতে করে পঁচনশীল দ্রব্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়িরা। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর ভোমরার গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে ভোমরা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি করতে উৎসাহিত হবেন। এখন থেকে মাত্র ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় যাওয়া যাবে। প্রয়োজনে সকালে ঢাকায় গিয়ে কাজ সেরে আবার রাতে সাতক্ষীরায় ফেরা যাবে। ফলে পদ্মাসেতু সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!