প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষায় খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর। নড়াইলের কালিয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার কারিগররা। দিনরাত হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠাক শব্দে মুখর কালিয়ার বড়নাল ও চাচুড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা।
বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার লোকজনের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা, কলাগাছের ভেলা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা।
রবিবার (১৬ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কালিয়ার বড়নাল গ্রামে কারিগররা নৌকা তৈরিতে এখন বেশ ব্যস্ত। কাঠের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমি পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী, আর বর্ষা এলে নৌকা বানাইয়ে বিক্রি করি। ৯ বছর ধরে এ কাজ করছি। এ সময় আমার কারিগররা দম ফেলার সময় পায় না। আমি নিজেও নৌকা তৈরি করি। জুন মাস থেকে নৌকা তৈরি কাজ শুরু হয় আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত তৈরি ও বিক্রি হয়। পানি বাড়লে বিক্রি বাড়বে। একটা নৌকা সাত থেকে বারো হাজার টাকায় বিক্রি করি। এবার ৮ থেকে ৯ হাত দৈর্ঘ্য’র নৌকা সাত থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে। গত কয়েক দিনে আমি বেশ কয়েকটি নৌকা বিক্রি করেছি।
নৌকা ক্রেতা বড়নাল গ্রামের মিন্টু মিয়া জানান, বন্যায় নিচু সড়ক ডুবে যায়। বিলের ধান আনা, পরিবারের সদস্যদের পারাপার করার জন্য ৯ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নৌকা কিনেছেন।
এ নৌকার কারিগর কাঠমিস্ত্রি শাহাজান মোল্যা জানান, তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী। বর্ষাকালে ৩ মাস নৌকা তৈরির কাজ করেন। বর্ষায় নৌকা আর বছরের বাকি সময়টা রাজমিস্ত্রির কাজ করে চলে তার সংসার। একটা নৌকা তৈরি করতে একজনের ২ দিন সময় লাগে। মজুরি পাই ২ হাজার ৫শ টাকা।
স্থানীয় নৌকা বিক্রেতা শিমুল হাসান (সাহেব আলী) বলেন আমাদের এলাকার তৈরি এই নৌকা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে পাশ্ববর্তী জেলার বাজার গুলিতেও বিক্রি হচ্ছ।
এ ব্যাপারে আলাপকালে নড়াইল বিসিক-এর উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার, তা করা হবে।
পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস এর নড়াইলের সমন্বয়ক শরিফুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এই বাহনটি প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। তবে কাঠের চাহিদা মেটাতে আমাদের প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড