নৌবাহিনীর পরবর্তী প্রধান হিসেবে রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, ওএসপি, এনপিপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি-কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।রবিবার জারি করা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আগামী ২৪ জুলাই অপরাহ্ন থেকে ভাইস এডমিরাল পদে পদোন্নতি পূর্বক তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। ২০২৬ সালের ২৩ জুলাই পর্যন্ত তিনি তিন বছরের জন্য নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বর্তমান নৌপ্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবালের স্থলভিষিক্ত হবেন।
আইএসপিআর জানায়, নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই বংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন স্টাফ, ইন্সট্রাকশন এবং কমান্ড দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি নৌসদরে সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশন্স), সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নেৌ অপারেশন্স ও নৌ গোয়েন্দা এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে অসামরিক-সামরিক সংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ওমর ফারুকসহ চারটি যুদ্ধজাহাজের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির কমান্ড্যান্ট এবং নেভাল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স সোয়াডস কমান্ড করেন। গৌরবময় সামরিক জীবনে তিনি কমান্ডার বিএন ফ্লিট এবং কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌঅঞ্চল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ভাষানচরে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সুচারুরূপে অব্যাহত রাখেন। তাছাড়া দুর্গম উপকূলীয় এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে বিশেষ অবদান রাখেন।
পাশাপাশি কক্সাজারের ইনানীতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর) ২০২২’ -এর প্রধান আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এ সময় মালদ্বীপ সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল টিম প্রেরণ, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রথমবারের মতো মালদ্বীপে দ্বি-পাক্ষিক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চাকরি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় নেতৃত্বের গুণাবলী, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, আন্তরিকতা ও সততার ছাপ বজায় রেখেছেন।
রিয়ার এডমিরাল নাজমুল দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও সামরিক কেৌশলগত শিক্ষা অর্জন করেছেন।
তিনি মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল ওয়ার কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্মানসূচক নেভাল কমান্ড কোর্স এবং বাংলাদেশে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। শৃঙ্খলাবোধ, সাহসিকতা ও একনিষ্ঠতার জন্য তিনি নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকদের কাছে সুপরিচিত। চাকরি জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অসামান্য সেবা পদকে (ওএসপি) ভূষিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মিসেস নাদিয়া সুলতানার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
খুলনা গেজেট/কেডি