নারী ও কন্যা শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, সমাজ থেকে অপরাধ উপড়ে ফেলা সম্ভব না। কিন্ত সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এ জন্য তরুণ সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর উপস্থিতি প্রতিনিয়ত বাড়ার সাথে সাথে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ছে। লোকলজ্জা ও অপমানের ভয়ে নীরব না থেকে মুখ খুলতে হবে এবং সচেতন শ্রেণীকে নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াতে হবে। ‘জনস্থানে নারীর নিরাপদ চলাচলে নিশ্চয়তা ও সহিংসতা বন্ধে’ খুলনায় অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে এ আহবান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার দুপুরে নগরীর সিএসএস আভা সেন্টারে অপরাজিতা যুব কল্যাণ সংস্থার আয়োজনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে যৌথভাবে সহায়তা করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ইউএনডিপি, সিআরআই এবং ইয়ং বাংলা।
অপরাজিতার নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার মন্ডলের সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনডিপির সেকেন্ড সেক্রেটারি (ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এন্ড জেন্ডার ইকুয়ালিটি) মিস পাওলা ক্যাস্টার নেইডারস্টাম।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপির সহকারি আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সেলিনা আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী এ্যাড. শামীমা সুলতানা শিলু, জেলা সমাজসেবা অফিসার আবিদা আফরিন এবং শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান। শুরুতেই গবেষণা লব্ধ ফলাফল থেকে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন রায়।
বিভিন্ন সংস্থার চালানো জরিপের বরাত দিয়ে কর্মশালায় জানানো হয়, ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী নারী ও কন্যা শিশুদের ৯০ শতাংশই রাস্তা, বাজার বা বিপনী কেন্দ্র, গণপরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য জনস্থানে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও অবাঞ্ছিত শারীরিক স্পর্শের শিকার হয়। দেশের ৭ টি মহানগরে ৮৪ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু অবমাননাকর ও যৌন কটূক্তিমূলক মন্তব্যের শিকার হয়ে থাকে। ৯৪ শতাংশ নারী তাদের জীবনে কোন না কোনভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। যার ফলে অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখিন হওয়ার কারণে ২০.৫ শতাংশ নারী গণপরিবহনের ব্যবহার এড়িয়ে চলে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৭৬ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী অন্তত একবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। শহর এলাকায় বসবাসকারী ৫৪.৭ শতাংশ নারী অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক সহিংসতাসহ অবাঞ্ছিত শারীরিক স্পর্শের শিকার হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়কাল থেকে নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা ধরণের নিপীড়ন এবং যৌন হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তরুণ সমাজ ও নাগরিকদের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)’র তরুণদের প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা, ইউএনডিপির মানবাধিকার কর্মসূচি এইচআরপি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যৌথভাবে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। যার লক্ষ্য সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত পরিবর্তন আনা এবং যৌথ হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো তৈরি করা।
কর্মশালায় তরুণ সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, বাজার ব্যবস্থাপন কমিটি এবং পরিবহন সেক্টরের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।
খুলনা গেজেট/ বিএমএস