খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার

‘নতুন ঘর পেয়ে বেজায় খুশি’ (ভিডিও)

নিতিশ সানা, কয়রা

বাঘের আক্রমণে স্বামী হারিয়েছেন ফাতেমা বিবি ও শাহিদা খাতুন। তারা দু’জনই এখন একই বাড়িতে বসবাস করেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাদের বসবাসের একমাত্র ঘরটি। সেই থেকে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস তাদের। বৃষ্টি এলে সবাই মিলে জড়ো-সড়ো হয়ে বসে থাকতে হতো। একটু বাতাস হলে ঘরের চাল উড়ে যাওয়ার আতংকে থাকতে হতো। এমনই অবস্থায় তাদের পাশে দাড়িয়েছে আইসিডি নামক একটি সংগঠন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে নতুন একটি ঘর। নতুন এই ঘর পেয়ে বেজায় খুশি তারা।

বাঘের আক্রমণে নিহত ওয়াহিদ আলী ঢালীর ছেলে শামসুর রহমান তার মা ও শাশুড়িকে নিয়ে বসবাস করেন একই বাড়িতে। অর্থের অভাবে ৫ সদস্যের পরিবারের চিকিৎসার, লেখাপড়ার খরচ আর সমিতির কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হয় শামসুর রহমানের। যে কারণে নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার। তবে আইসিডি নামক একটি সংগঠন তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে। এখন নতুন এই ঘরেই বসবাস করছেন তারা। এমনটাই জানিয়েছেন কয়রা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ঘোল আটি গ্রামের শামসুর রহমান।

তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, বাবার মুখ আমার মনে নেই। মায়ের মুখে শুনেছি আমি তখন অনেক ছোট। আমার বাবা সুন্দরবনে গোলপাতা কাটতে যেয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন। এরপরে আমার মা তিন বোন ও আমাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। বোনদের বিয়ে দিয়েছে। আমি যাকে বিয়ে করেছি তার পিতাও বাঘের আক্রমণে নিহত হন। কোন ছেলে না থাকায় আমার শাশুড়ীকেও আমার বাসায় রেখেছি। সামান্য আয়ে পরিবারের ৫ সদস্যের মুখে কোন রকমে খাবার তুলে দিতে পারছি।

তিনি বলেন, নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সমিতি থেকে লোন করে একটি মোটর চালিত ভ্যান কিনে চালাইতে থাকি। সংসারের খরচ মিটিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা দিতে অনেক কষ্ট হয়। ঘর বাধার স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছিলো। তখন আইসিডি আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে।

শামসুর রহমানের মাতা ফাতেমা বিবি বলেন, আমার স্বামী সুন্দরবনের গোলপাতা কাটতে যেয়ে বাঘে ধরে। তখন আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে মানুষ করেছি। পরিবারে অভাব থাকায় ভাঙ্গা ঘরে বাস করছিলাম। তখন আইসিডি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। একটা নতুন ঘর বানিয়ে দিয়েছে।

শামসুর রহমানের শাশুড়ী শাহীদা খাতুন বলেন, মেয়েটা তখন কোলে তখন আমার স্বামী সুন্দরবনে ঝিনুক কোড়াতে যেয়ে বাঘে ধরিলো। তার লাশটাও খুঁজে পায়নি। তার সাথে যারা গেছিলো তারা ভয়তে চলি আইলো। মৃত্যুর পরে তার লাশটাও শেষ দেখা দেখতে পাইনি। তারপর মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়ে অনেক কষ্ট করে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছি। এখন আমি মেয়ের বাড়িতে থাকি। তবে বৃষ্টি এলে মেয়ে-জামাইয়ের ভাঙ্গা ঘরের এক কোণে সবাই বসে থাকতাম। আইসিডি আমাদের একটা ঘর দেওয়ায় এখন আমরা শান্তিতে থাকতে পারছি।

আশিকুজ্জামান আশিক বলেন, শামসুর রহমানের বাবা এবং শ্বশুড় দু’জনই বাঘের আক্রমণে নিহত হয়। তাদের ঘরটি খুবই জরাজীর্ণ ছিল। আম্ফান ঝড়ে এই ঘরটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ওই সময় থেকে পানি পড়তো। আমরা উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে সেই ঘরটি ভেঙে আরেকটি নতুন ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এই পরিবারে দু’জন ‘বাঘ বিধবা’ রয়েছে তাদেরকে আমরা দেখভাল করছি এবং তারা যেন বাকী জীবনটা এখানে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।

ভিডিও দেখুন :




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!