খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা, বরিশালে আজ বৃষ্টি হতে পারে

নতুন আতঙ্ক অতি সংক্রামক মাঙ্কিপক্স

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে অতি সংক্রামক মাঙ্কিপক্স। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই নতুন করে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রেও। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি সম্প্রতি কানাডা থেকে ফিরেছেন।

স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ মে) ম্যাসাচুসেটসের স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, একজন প্রাপ্ত বয়স্কর শরীরে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস পাওয়া গেছে।

এক বিবৃতিতে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, এই ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থাও স্থিতিশীল।

কানাডার পাবলিক হেলথ এজেন্সি বুধবার জারি করা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ধরনের সংক্রমণ সম্পর্কে তারা সচেতন। পরিস্থিতির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

পর্তুগাল জানিয়েছে, দেশটিতে ৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া স্পেনে ২৩ জনের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

উল্লেখ্য, মাঙ্কিপক্স সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় দেখা যায়। এটি মানুষের গুটিবসন্তের মতো একটি সংক্রমণ। এটি প্রথম ১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে পাওয়া গিয়েছিল।

সাধারণত যেভাবে ছড়ায়

বিজ্ঞানীদের মতে, ‘মাঙ্কিপক্স’ জলবসন্ত (চিকেনপক্ষ) ভাইরাসের পরিবারভুক্ত ও ছোঁয়াচে। আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস এক জনের শরীর থেকে অন্য জনের দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন—বিরল এ ভাইরাস প্রাণীদেহ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে।

সাধারণত মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সাধারণ ‘ফ্লু’ বা ঠান্ডাজনিত অসুখের মতো অসুস্থতা ও লিম্ফ নোডের (শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার একটি অঙ্গ) ফোলা দিয়ে শুরু হয়ে ফুসকুড়ি ও ফোসকার মতো ক্রমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট অঞ্চলে শনাক্তের তথ্য এত দিন ছিল। কিন্তু, এখন ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের খবর সামনে আসছে।

কতটা বিপজ্জনক মাঙ্কিপক্স, উপসর্গ কী কী?

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রধান উপসর্গগুলো হলো—জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা, খিঁচুনি, অবসাদ এবং সারা গায়ে ছোপ ছোপ দাগ।

বেশির ভাগ সংক্রমণ দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সাধারণত, এ ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর, ফুসকুড়ি ও লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

বিজ্ঞানীদের দাবি—জীবিত বা মৃত বন্য প্রাণীর মাংস খেলে এ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।

শরীরের তরল, ঘা, খোলা ক্ষত স্থানের সংস্পর্শে এলে বা দীর্ঘস্থায়ী যোগাযোগের পরে শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণার মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। রোগের সময়কাল সাধারণত ছয় থেকে ১৩ দিন। তবে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের লক্ষণগুলো সংক্রমণের পাঁচ থেকে ২১ দিনের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো হালকা বা গুরুতর হতে পারে এবং সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই চলে যায়। মাঙ্কিপক্সের ফলে ত্বকে সৃষ্টি হওয়া ক্ষতে খুব চুলকানি বা যন্ত্রণা হতে পারে।

যৌনসম্পর্ক থেকেও ছড়ানোর শঙ্কা!

বিজ্ঞানীরা এত দিন বলেছিলেন, ভাইরাসটি সহজে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে না। এ ছাড়া এর আগে মনে করা হতো শিশুদের মধ্যেই বেশি পরিমাণে ছড়ায় এ মাঙ্কিপক্স। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে অসুখটি।

জেনে নিন, এ রোগ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তেমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

১.

কানাডায় ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে মাঙ্কিপক্স। স্পেন ও পর্তুগাল মিলিয়ে ৪০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন এ অসুখে। ইংল্যান্ডেও বাড়ছে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রেরও ছড়িয়েছে অসুখটি।

২.

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র-সিডিসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—যৌনসম্পর্কের সঙ্গে এ রোগের সংক্রমণ ছড়ানোর যোগসূত্র থাকতে পারে। সিডিসি বলছে—সমকামী ও উভকামী পুরুষ ও নারীর মধ্যে এ রোগের হার বেশি। মার্কিন স্বাস্থ্য দপ্তর খতিয়ে দেখছে কীভাবে বাড়ছে এ অসুখ।

৩.

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে—পুরুষের সঙ্গে পুরুষের যৌনসম্পর্কের মধ্যে দিয়েও এ রোগ ছড়াচ্ছে। সমকামী পুরুষদের সতর্ক হতে বলা হয়েছে এ পরিস্থিতিতে।

৪.

এর আগে সাধারণত আফ্রিকাতেই এ রোগ বেশি হতো। এ প্রথম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে এ রোগ ছড়িয়েছে।

৫.

চিকেনপক্সের মতো নানা ধরনের উপসর্গসহ এ রোগ শুরু হয়। এর সঙ্গে চলতে থাকে জ্বর। এখন পর্যন্ত কারও এ রোগে মৃত্যু হয়নি। যাদের চিকেনপক্সের টিকা নেওয়া আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক আকার নেবে না বলে ধারণা অনেকের।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!