২০১৭ সালের ১১ জুলাই। বেলা সাড়ে ১১ টা। তখন রাস্তায় অনেক মানুষের চলাচল। এরমধ্যে কয়েকজন যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে অপর এক যুবককে ধাওয়া করছে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ওই যুবক স্থানীয় একটি অটোমোবাইলসের দোকানে আশ্রয় নেয় । সেখানে গিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের নাম সাইদুল হাওলাদার। জোড়াগেট রেলক্রসিং সংলগ্ন হাজেরা বেগমের ছেলে সে। পেশায় একজন মৌসুমী ফল বিক্রেতা।
আজ সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবেন জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ভিকটিম ও মামলার আসামিরা একই এলাকার বাসিন্দা। তারা ওই এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত ছিল। এলাকায় অবৈধ কাজের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সাইদুল খুন হওয়ার কয়েকমাস আগে প্রতিপক্ষ বাবু ওরফে গুড্ডু বাবুকে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সাইদুলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে বাবু। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন তালেব ও শুকুরের মাধ্যমে মাদক ক্রয়ের কথা বলে ভিকটিমকে ডেকে নেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে সাইদুলকে জোড়াগেট নাদিয়া অটোমোবাইলসের দোকানের সামনে দেখা মাত্র বাবু ও তার সহযোগিরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে সাইদুল নাদিয়া অটোমোবাইলসের ওই দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সন্ত্রাসীরা ওই দোকানের ভেতর গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চারজন আসামির বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকান্ডের পাঁচদিন পর গ্রেপ্তার হয় মামলার আসামি মো: আশিকুর রহমান অশিক। খুলনার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুমি আহম্মেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
১৭ জুলাই প্রভাতী স্কুলের সামনে থেকে মামলার প্রধান আসামি বাবু ও আল মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে তাদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নামলে প্রভাতী স্কুলের ভেতর থেকে বাবুর সহযোগীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাবু ও মো: আল মাহমুদ ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
একই বছরের ২২ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও খুলনা থানার ইন্সপেক্টর সৈয়দ মোশারেফ হোসেন বাবু ও আল মাহমুদকে বাদ দিয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- সুমন মল্লিক, আশিকুর রহমান আশিক, মো: তালেব হাওলাদার তালিব, মো: কালু ওরফে ছোট কালু, মো: শাহাদাত হোসেন সজল, কাইয়ুম (পলাতক) ও শুকুর হাওলাদার (পলাতক)।