ধুলোবালির রাজত্বে অসহায় হয়ে পড়েছে নগরবাসী। একদিকে রাস্তার পাশে অবৈধ বালি ব্যবসা অন্যদিকে উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তার ওপরে ফেলে রাখা হচ্ছে ধুলোবালি। বাতাসে উড়ে বাড়ছে জনভোগান্তি ও রোগবালাই।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে মুজগুন্নি মহাসড়ক অন্যতম। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস আদালতসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া হাজার হাজার মানুষকে। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ধুলাবালি। ফলে মাস্ক পরেও এ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তারা। যার অন্যতম কারণ সড়কের পাশে অবৈধভাগে গড়ে ওঠা ইট বালির ব্যবসা। রীতিমত অফিস খুলে দিনের পর দিনে এ ব্যবসা চললেও দেখেন না জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণাধীন ভবন ঘিরে/ঢেকে কাজ করার কথা থাকলেও তা না করে মাটি, বালি, পাথর ইত্যাদি রাস্তার ওপর রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। গাড়ি চলাচলের ফলে ধুলো ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। ধীর গতির কাজ ও প্রতিকার ব্যবস্থা না থাকায় বাতাসের সঙ্গে ধুলো উড়ে রাস্তায় হাঁটার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, এলার্জিসহ নানা ধরণের রোগ।
নগরীর আহসান আহমেদ রোড, হাজী মুহসীন রোডের সংযোগস্থল থেকে কাষ্টমঘাট, সামসুর রহমান রোডসহ অনেক রাস্তার উন্নয়ন কর্যক্রম চলছে। এসকল রাস্তার অনেক অংশ জুড়ে রয়েছে বালু, মাটি ও পাথরের স্তুপ।
নগরীর ১নং কাষ্টমঘাটের বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, গত কয়েকমাস ধরে চলছে এ রাস্তার উন্নয়ন কাজ। এখনও শেষ হয়নি। বর্ষার সময়ে ধুলোবালি কাদায় পরিণত হতো। মৌসুম পরিবর্তনের ফলে কাদার পরিবর্তে এখন ধুলোবালিতে পরিণত হয়েছে। একটু বাতাস হলে রাস্তায় বের হওয়া যায় না। তাছাড়া জানালা খোলার কোন উপায় নেই।
নগরীর মুজগুন্নি শিশু পার্কের সামনে দক্ষিণ পাশে বালুর স্তুপ সম্পর্কে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: লিটন জানান, ওই এলাকার হাউজিং এর এক প্লট মালিক পার্কের দক্ষিণ পাশে বালু রেখেছে জেনে আমি তাকে এজন্য চার্জ করেছি। তিনি লোক লাগিয়ে সেখান থেকে বালু সরিয়ে নিচ্ছে বলে আরও জানিয়েছেন। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন।
ধুলোবালির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মো: নাজমুল কবীর এ প্রতিবেদককে জানান, ধুলোবালির কারণে শ্বাসনালী, এ্যাজমা ও সিওপিডি, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসে ক্যানসারসহ চর্ম রোগ হতে পারে।
তিনি আরও জানান, ধুলোবালির মধ্যে অনেক ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। যা সরাসরি ফুসফুসে যায় না। এটা শ্বাসনালীতে জমে পরে ফুসফুসে প্রবেশ করে। যা স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। শ্বাসনালীর গায়ে যে কোষগুলো থাকে সেগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে যারা জন্মগতভাবে শ্বাস কষ্টের রোগী তাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ধুলোবালি।
এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বাতাসে ধুলোবালি উড়তে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বাইরে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করে হাত, মুখ ও নাক ভালভাবে পরিস্কার করতে হবে।
খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্ষার সময়ে বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ কম থাকে। শুষ্ক মৌসুম এলে এর পরিমাণ বেড়ে যায়। বাণিজ্যিক এলাকায় দূষণের মাত্রা একটু বেশি। বাতাসে দু’ধরণের ধুলোবালির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। একটি ভারী ও অপরটি হালকা। হালকা ধুলোবলি সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে তিনি জানিয়েছেন। এটি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। বালি পরিবহনের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম ও কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কেউ কোন নির্দেশনা মানছেন না।
প্রতিকারের উপায় হিসেবে তিনি বলেছেন, বালি পরিবহনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নির্মাণাধীন বাড়িগুলো চারপাশ ঢেকে কাজ করা উচিত বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম