নৌ-যান শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপি কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। সারা দেশের ন্যায় রোববার থেকে যশোরের নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরেও পালিত হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি। ফলে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের ঘাট সমূহে লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে।
অচল হয়ে পড়ছে বন্দরের কার্যক্রম। চলমান কয়লার মৌসুমে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। ফলে চলমান মৌসুমে এমন কর্মবিরতির ডাক দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এদিকে সারাদেশের ন্যায় নওয়াপাড়া নদী বন্দরে কর্মবিরতির বাস্তবায়নের লক্ষে নওয়াপাড়া নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শনিবার রাত ৭টার সময় যশোর-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম মাষ্টার, লঞ্চ লেবার এ্যাসোসিয়শন খুলনা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল মাষ্টার, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন নওয়াপাড়া শাখার অফিস সেক্রেটারি নিয়ামুল হক রিকো প্রমুখ।
বক্তারা দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত রাজপথে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দাবি গুলো হলো- নৌ যান শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকায় উন্নীতকরণ, দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লক্ষ টাকা নির্ধারণ, কন্টিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদান, বাল্কহেডের রাত্রিকালীন চলাচলের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ, পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকরকরণ, চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল ও চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধসহ ১০ দফা।
ভরা মৌসুমে নৌ-যান শ্রমিকদের ডাকা এ কর্মবিরতিতে রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তারা আশংকা করছেন, চলমান কয়লা ও সারের মৌসুমে নৌ-যান শ্রমিকদের ডাকা এ অনির্দিষ্ট কর্মবিরতি প্রত্যাহার না হলে অচল হয়ে পড়বে নওয়াপাড়া নদী বন্দর। বন্ধ হয়ে যাবে লোড-আনলোডের কাজ। কর্মহীন হয়ে পড়বে অভয়নগর নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের হাজার হাজার শ্রমিক। বন্দর ব্যবহারকারি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
হ্যান্ডলিং শ্রমিক সাগর আহমেদ, হাসান মোল্যা, রুম্মান মোল্যা, ওসমান বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় আজ কাজে এসে দেখি জাহাজের লোড আনলোড বন্ধ রয়েছে।কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। কবে যে কাজ হবে তা বলতে পারছি না। কারা যেন কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। কাজ না হলে না খেয়ে মরতে হবে।
অভয়নগর নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফালগুন মন্ডল বলেন, নৌ-যান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বন্দর এলাকায় লোড-আনলোডের কাজ বন্ধ থাকবে। ফলে ১৭হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিককে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। সেই সাথে তাদের প্রতিদিনকার উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে শ্রমিক পরিবারগুলোর উপর।
নওয়াপাড়া সার-সিমেন্ট, খাদ্য শষ্য ও কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ)র সিনিয়র সহ সভাপতি শাহ্ জালাল হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই নাজুক অবস্থায় পড়েছেন। তার উপর এই ভরা মৌসুমে নৌ-যান শ্রমিক কর্মবিরতির ফলে নওয়াপাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ব্যবসায়ীরা। তিনি কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাপূর্বক সমস্যার সমাধানের আহবান জানান।