খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  দুর্গাপূজার ছুটি বৃহস্পতিবার একদিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
  খুলনায় মাদক মামলায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও করোনা সংকটে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

শেখ বদরউদ্দীন, ফুলবাড়ীগেট

নগরীর ফুলবাড়ীগেট বাসষ্টান্ড মোড়ে রিকশা চালক কালাম মুন্সি বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। আগে দিনে যেখানে তিনি চার-পাঁচশত টাকা রোজগার করতেন এখন তা দুই-তিনশ টাকায় নেমে গেছে।

তিনি বলেন, আগের মতো এখন আর বেশি মানুষ বাইরে আসেনা। যদি সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়, কি খেয়ে বেঁচে থাকবো? সংসার কীভাবে চালাবো?

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়ীগেট কুয়েট রোড, ল্যাবরেটরী মোড়, মিরেরডাঙ্গা টিবি হাসপাতাল রোড, শিরোমনি বাজার, গিলাতলা সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু কালাম মুন্সি নয় সড়কে থাকা প্রায় সব রিকশা/ভ্যান চালক ও নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা একই ধরনের।

একদিকে কমে গেছে আয়, তার উপর রাস্তায় বের হতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বাদামতলা চক্ষু হাসপাতালের সামনে বিশ্রামরত রিকশাচালক মোঃ জুয়েল মৃধা বলেন, বিশ্রাম তো আর এমনি এমনি নেই না ভাই। কোনো যাত্রী নাই। সকাল থেকে ১০০ টাকাও আয় হয়নি এখনো। দিনশেষে নিজে খেতে হবে আবার পরিবারের জন্য কিছু টাকা গ্রামেও পাঠাতে হবে। কোনো জমানো টাকাও নেই যে তা দিয়ে চলবো। এখন সব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।

পাশে থাকা দিনমজুর লিটন সরকার বলেন, কাজ তো এখন একদমই নাই, তার উপর নতুন করে করেনা ভাইরাস নাকি বেড়েছে। লোক রাস্তায় বের না হলে ইনকাম হবে কোথা থেকে এদিকে আবার বাজারেও দাম বেড়েছে সবকিছুর। আগে মহসেন জুট মিলে কাজ করতাম মিলটি বন্ধ হওয়ার পর যখন যে কাজ পাই সেটাই করি। সামনে দেখছি এখন তাও পাওয়া যাবে না।

মানুষ উপার্জন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। জীবন বাজি রেখে জীবিকার জন্য কাজে যাচ্ছে। কিন্তু মহামারী করোনার আঘাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পসহ সামগ্রিক উৎপাদন ও অর্থনীতি ধসে পড়েছে। ফলে ৭০ ভাগ মানুষের উপার্জন কমে গেছে। অথচ কমেনি জীবনযাত্রার ব্যয়। উল্টো মানুষের উপার্জন কমলেও বেড়েছে জীবনযাত্রার খরচ। কেননা গত কয়েক মাসে অব্যাহতভাবে বেড়েছে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্য। মাছ, মাংস ও শাকসবজির দামও উর্দ্ধমুখী। ফলে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে কস্ট কাটিংয়ের পথে হাঁটছেন অনেকেই। এর ফলে চাকরি হারাচ্ছেন অনেকেই। আবার রোজগার কমে যাওয়ায় যেমন বিপাকে পড়েছে মানুষ, তেমন চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী।

অনেকেই নিয়মিত বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। মানুষ বাসা ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক বাসা খালি হয়ে গেছে। কেউ কেউ বাসা বদলে অপেক্ষাকৃত কম খরচের বাসায় যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার এলাকা ছেড়ে গ্রামেই চলে যাচ্ছেন। বাড়ি ভাড়ার ওপর নির্ভরশীল অনেক বাড়ির মালিকও পড়েছেন বিপাকে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়েও খরচ বেড়েছে। অথচ আয় বাড়েনি।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে কাজ হারানোর পর এখন বাসস্থানও হারানো শুরু করেছে মানুষ। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত ধরে মানবিক বিপর্যয় নিয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। অনিশ্চিত জীবন নিয়ে শহর ছেড়েছে বহুজন। ভাড়ার আয় বন্ধ হওয়ায় বিপাকে আছেন অনেক বাড়িওয়ালা। একইভাবে জরুরি ওষুধ, ভোগ্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। কিছুদিন আগে গরিবের ডাল ভাতের সঙ্গী মোটা মসুর ডাল ছিল ৬০ টাকা কেজি। এখন সেটা ৯০ টাকা। আর এ সময়ে মোটা চালের দামও বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত।

ফলে সাধারণ মানুষে জীবন ও জীবিকার হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীর এই সংকটে সবাই এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। মানুষ সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় পড়েছে জীবন ও জীবিকা নিয়ে। আবার এরই মধ্যে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে কর্ম হারানোর আতঙ্ক। ফলে মানুষ এখন চরম উদ্বিগ্ন। যারা কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন আর কর্ম হারিয়েছেন তারা আবার নতুন করে দরিদ্রের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!