“আমি গাছ নাগাই, গাছ অক্সিন (অক্সিজেন) দেয়, দেশ ঠান্ডা নাখে”- সাদামাঠা এই উপস্থাপনায় বলে দেয় তিনি আপদ মস্তক অতিসাধারণ। অস্থি-চর্মসারনগ্ন চেহারায় বয়সের ছাপ। দু’সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা দু’য়েক আগেই অনুষ্ঠান আঙ্গিনায় পৌঁছে গেছেন স্বপরিবারে। অভাবের সংসারের সর্বোচ্চটা দিয়ে সেরা পোষাকে তার আগমন।
তিনি কপিলমুনি গর্ব, সবুজ পৃথিবী গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা সিদ্দিক গাজী। সিদ্দিক গাজী আজ সংবর্ধিত অতিথি। দেশ বরেণ্য অনেক মানুষ এসেছেন তাকে সংবর্ধনা জানাতে। অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠন শেখ ইমাম উদ্দীন সংসদ। স্থান কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আব্দুস সালাম মিলনায়তন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স.ম আলী রেজার সভাপতিত্বে ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশ বরেণ্য ব্যক্তি ও স্থানীয় সুধীজন সবাই এই অনুষ্ঠানের অতিথি, আর যেখানে শুধু দূষণমুক্ত দেশ গড়ার কারিগর, সবুজ পৃথিবীর স্বপ্নদ্রষ্টা বৃক্ষপ্রেমী সিদ্দিক গাজী সম্মানীত অতিথি।
অক্ষর জ্ঞানহীন সাদামনের এই মানুষটিকে সম্মান জানাতে দাড়িয়ে সকল অতিথি যখন করতালি দিতে থাকে তখন ফ্যাঁলফ্যাঁল চোখে তাকান সিদ্দিক। সিদ্দিক হয়ত এ সবের মুল্য বোঝেনি, তবে সবুজ দেশ গড়তে হবে কিভাবে বিধাতা তাকে সেটি শিখিয়েছে। ইতোমধ্যে সিদ্দিক বিনামুল্যে ১২ হাজার বকুলের চারা লাগিয়েছেন।
১৯৮৫ সালে নিজ বসতবাড়ির এক খন্ড জমিতে বকুল ফুলের নার্সারি গড়ে তুলে সিদ্দিক সবুজ দেশ গড়ার স্বপ্ন শুরু করেন। নিজ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চারা রোপনের পর জেলা ছাড়িয়ে ভিন্ন জেলা। সীমানার ব্যাসার্ধ বৃদ্ধির সাথে সাথে হত দরিদ্র সিদ্দিকের ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। জরাজীর্ণ কুড়েঘরে সিদ্দিকের বসবাস। স্ত্রী এবং দু’সন্তান শতকষ্টের মাঝেও সিদ্দিকের সবুজ বিপ্লবের যেন যোগ্য সারথী। তাইতো শেখ ইমাম উদ্দীন সংসদের আহবানে তারাও এসেছিল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
শত ব্যস্ততা ফেলেযারা এ মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেখ ইমাম উদ্দীন সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির আহবায়ক ঢাকা বিশেষ আদালতের জেলা ও দায়রা জজ শেখ হাফিজুর রহমান, সংগঠনের সদস্য কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার, অধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুল্যাহ বাহার, সাবেক উপাধ্যক্ষ মোঃ আফসার আলী, সাবেক প্রধান শিক্ষক অমিয় রঞ্জন দে, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী এস এম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজ, কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়ার্দ্দার, যুগোল কিশোর দে, প্রধান শিক্ষক রহিমা আখতার শম্পা, ফাঁড়ির ইনচার্জ সঞ্জয় দাশ, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব শেখ আব্দুর রশীদ, সমাজ সেবক এম বুলবুল আহমেদ, মোঃ মুজিবর রহমান, শেখ ইকবাল হোসেন খোকন, সাংবাদিক শেখ শামছুল আলম পিন্টু, প্রভাষক প্রনব ঘোষ বাবলু, জিএম আমিনুল ইসলাম, শেখ আব্দুস সবুর, মোহনা টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধি তৃপ্তিরঞ্জন সেন, দীপ্ত নিউজের মফস্বল বার্তা সম্পাদক শেখ নাদীর শাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন শেখ ইমাম উদ্দীন সংসদের যুগ্ম আহবায়ক শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রসঙ্গত, সিদ্দিক গাজী খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের বেলায়েত আলী গাজীর ছেলে। দাম্পত্য জীবনে তিনি এক ছেলে জাহিদুল (১১) ও এক মেয়ে খাদিজা (৮) এর জনক। ১৯৯২ সালের ইউপি নির্বাচনে সিদ্দিক গাজী সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন। সেবার ঘোড়ায় চড়ে চালিয়ে ছিলেন নির্বাচনী প্রচারণা। মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েও তিনি চেয়ারে বসতে পারেননি। পরেরদিন ফলাফল ঘোষণায় প্রতিদ্বন্দ্বিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, সিদ্দিকের প্রতি ভালবাসার টানে নাকি তিনিও কোনদিন পরিষদে যাননি। হয়তোবা সেদিনের চেয়ারে বসতে না পারার বেদনা এখনও তাকে তাড়া করে ফেরে।
সিদ্দিক গাজীকে নিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে।জনপ্রিয় বিটিভি ম্যাগাজিন ‘ইত্যাদি’ তাকে নিয়ে ভিন্নমাত্রায় অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। ৩০ অক্টোবর শেখ ইমাম উদ্দীন সংসদ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা ও সিদ্দিকের ঋণ পরিশোধে অর্থ সহায়তা করেছেন।
অনুষ্ঠানে সংসদের নেতৃবৃন্দ বলেন, সিদ্দিক অতিসাধারণ মানুষ কিন্তু তার কর্ম অসাধারণ। তাকে সম্মান জানাতে পেরে আমরাও গর্বিত। সিদ্দিক আমাদের অনুপ্রেরণা। একটি সবুজ পৃথিবী গড়ার পাঞ্জেরী। সিদ্দিক কপিলমুনির গর্ব।তিনি জাতীয়ভাবে সম্মানীত পাওয়ার দাবিদার। শেখ ইমাম উদ্দীন সংসদের আজকের এই শুভসূচনা বৃক্ষপ্রেমী সিদ্দিককে একদিন জাতীয়ভাবে সম্মানীত করবে এমন প্রত্যাশা উপস্থিত সুধীজনের।
খুলনা গেজেট/এনএম