খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড়ের কেডিএর সামনে যাত্রীছাউনির পাশে ‘স্কুট’ নামের একটি সংস্থার বুথে সাধারণ মানুষের ভিড়। সেখানে যেতে দেখা যায়, একটি ছাতার নিচে কয়েকজন বসে রয়েছেন। চলছে রেজিস্ট্রেশন। কেউ কেউ বাইক নিয়ে সাতরাস্তা যাচ্ছেন। কেউ চালিয়ে এসে বুথে বাইক ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই দলবদ্ধভাবে ভাড়া নিয়ে নগর ঘুরে দেখছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভিড় রয়েছে বুথে। ভাড়া নিয়ে নগর ঘুরে বাইকটি ফেরত দিয়ে চলে যাচ্ছেন তারাও। দারুণ অনুভূতি সবার।
চিকিৎসক, মেডিকেলের ছাত্র, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বেকারির কর্মচারী ও পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশন করে বাইক ভাড়া নিচ্ছেন। কেন-ই-বা করবেন না। মাত্র ১০ টাকায় রেজিস্ট্রেশন।
শিববাড়ি মোড় থেকে সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত বাইক চালিয়ে যেতে লাগছে ১০ টাকা। যদি কেউ বেশি সময় অতিবাহিত করতে চায় তাদের জন্য রয়েছে আধা ঘণ্টা এবং এক ঘণ্টার পৃথক প্যাকেজ। এতেও খরচ কম। আধা ঘণ্টার জন্য ৬০ টাকা এবং এক ঘণ্টার জন্য লাগছে ১০০ টাকা। অনেকেই শখ করে পরিবেশবান্ধব বাইকটি ভাড়া নিয়ে দিচ্ছেন এক চক্কর।
বুথে থাকা স্কুট’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এসব বাইক ব্যাটারিচালিত। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। যিনি ভাড়া নেবেন তাকেই চালিয়ে যেতে হবে গন্তব্যে। বাইকগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রক সফটওয়্যার, যা বাইককে চুরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের উদ্যোগে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নগরীর সাত রাস্তা মোড় থেকে শিববাড়ি মোড়ে দুটি বুথ প্রাথমিকভাবে চালু করা হয়েছে। বাইকটি যাতে নগরীতে চলাচল করতে পারে সেজন্য খুলনা সিটি করপোরেশন ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
ফেসবুকে পোস্ট দেখে শিববাড়ি মোড়ের বুথে এসে রেজিস্ট্রেশন করেছেন পলাশ নামের এক যুবক। তিনি বলেন, বাইকটি আধা ঘণ্টার জন্য ৬০ টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়েছি। খুব ভালো লেগেছে। সাতরাস্তা পর্যন্ত যেতে চেয়েও পরে দুই-পাঁচজনকে বাইকটি সম্পর্কে জানালাম। যতটুকু সময় চালিয়েছি, তাতে আমি খুব সন্তুষ্ট।
খুলনা মহানগরীর বেসরকারি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, বাইকটি মেয়েদের জন্য খুবই আরামদায়ক। স্কুল-কলেজে যাতায়াতে মেয়েদের জন্য নিরাপদ। করোনা পরিস্থিতি চলছে। সেক্ষেত্রে বাইকটি নিজের মতো করে চালানো যায়। বাইকটিতে কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন; আধা ঘণ্টা ও এক ঘণ্টা ভাড়া নেওয়া যায়। সার্ভিসটি চালু হওয়ার পর তিন-চারবার বাইক ভাড়া নিয়েছি।
একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী গোলাম হাফিজ হৃদয় বলেন, বাইক সার্ভিসটি দেশের প্রথম খুলনায় চালু হয়েছে। এটি খুবই আরামদায়ক। শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত। আমি প্রতিদিনের কাজ করতে এক ঘণ্টার জন্য বাইকটি ভাড়া নিই। বাইকটি চালাতে অনেক ভালো লাগে আমার।
স্কুট লিমিটেডের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রেদওয়ান আহমেদ বলেন, ইলেকট্রিক বাইক শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের (স্কুট) এই বাইক রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সহজে ভাড়া নিতে পারেন যে কেউ। বাইকটি চালক নিজেই চালিয়ে যাবেন গন্তব্যে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য যানজট নিরসন। এই বাইক যানজট নিরসনে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সহজে অল্প ভাড়ায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। স্কুট মূলত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নের কাজ করছে। স্কুটের মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সহজ হয়ে যাবে। মানুষকে পাবলিক বাসে ঝুলে যেতে হবে না। স্কুট খুব অল্প ভাড়ায় দিচ্ছে এই সার্ভিস। বাইকটির ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। ভাড়া নিয়ে শিববাড়ি থেকে সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া যাবে। প্রথমবার নিবন্ধন ফি’র জন্য দিতে হবে ১০ টাকা। এরপর নিবন্ধনকারী যতবার ভাড়া নেবেন ততবার তাকে ১০ টাকা করেই ভাড়া দিতে হবে। আরও দুটি প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। ৩০ মিনিটের জন্য নিলে ৬০ টাকা এবং এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া নিতে লাগবে ১০০ টাকা। অনেক ডেলিভারিম্যান যারা পার্সেল, ডেলিভারি করে তাদের জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে। বাইক সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেউ যদি রুট বাদে এদিক-ওদিক যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে বাইকটি অটো বন্ধ হয়ে যাবে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি