খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় নিঁখোজ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি
  বাজারে থাকা এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ, বাজারজাতকারীকে ১৬ লাক টাকা জরিমানা

দেশে প্রথমবারের মত দেখা মিলল ‘মার্বেল গোবি’ মাছ

গেজেট ডেস্ক

গাজীপুরের শ্রীপুরের ঘেরে ধরা পড়া মাছটির পরিচয় জানা গেছে। এর নাম মার্বেল গোবি। এই মাছ বাংলাদেশের কোনো নদী বা উন্মুক্ত জলাশয়ে এই প্রথম দেখা গেছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মার্বেল গোবি মাছ মূলত পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। খেতে বেশ সুস্বাদু হওয়ায় ওই অঞ্চলে মাছটি বেশ জনপ্রিয় ও দামি। বাংলাদেশের বেলে মাছের জাতের একটি প্রজাতি এটি। তবে ওই জাতের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় আকৃতির হয়ে থাকে।

গত রোববার শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের গোলাঘাট এলাকায় মো. আবু তালেব নামের এক মাছচাষির ঘেরে প্রায় দুই কেজি ওজনের একটি মাছ ধরা পড়ে। মাছটির বিশাল আকারের মুখ, শরীরের রং দেখতে কিছুটা কালচে। গায়ে হলুদ রঙের ছোপ ছোপ দাগ। এই মাছ দেখে এলাকার লোকজন চিনতে পারছিলেন না। অপরিচিত মাছ ধরা পড়ার খবরে উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় করেন।

দেশের অন্তত পাঁচজন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা একে মার্বেল গোবি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের নদ-নদী জলাশয়ে এর আগে কেউ এই মাছ দেখতে পাননি। ধারণা করা হচ্ছে, অন্য মাছের পোনার সঙ্গে এটি বাংলাদেশে আসতে পারে। অথবা পূর্ব এশিয়া থেকে ভারতের মিজোরাম বা মিয়ানমারের কোনো নদী হয়ে এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখানকার পানিতে এটি বড় হয়েছে বা বড় হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ছবি দেখে আমি নিশ্চিত, এটা মার্বেল গোবি। বাংলাদেশে এই মাছ এর আগে কোথাও দেখা যায়নি। হয়তো এই মাছ আগে থেকেই বাংলাদেশে অল্পসংখ্যক ছিল। অথচ সম্প্রতি কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশে এসেছে। এই মাছ দেশের অন্যান্য নদ-নদীতে আছে কি না, তা আরও পর্যবেক্ষণ করে দেখা দরকার। কারণ, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ওই মাছ বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আছে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম বলছে ‘ওক্সাইলিউট্রিস মারমোরাটা’। এটি সর্বোচ্চ ৬৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে সাধারণত ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, থাইল্যান্ডসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই মাছ দেখা যায়। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের তথ্যমতে, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই মাছ সচরাচর দেখা যায়। ফলে এটা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।

বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক মৎস্য বিভাগের সাবেক পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, এটি অবশ্যই মার্বেল গোবি মাছের জাত। এটা বাংলাদেশের স্থানীয় প্রজাতির মাছ নয়। পূর্ব এশিয়া থেকে এটি বাংলাদেশে এসেছে। দেশের অন্য কোনো জায়গায় এর আগে এই মাছ দেখা যায়নি। ফলে এটি বাংলাদেশের পরিবেশে আদৌ কতটুকু টিকে থাকতে পারবে বা বাংলাদেশের অন্য মাছের জন্য হুমকি কি না, তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) সর্বশেষ হিসাব (২০১৯) বলছে, বাংলাদেশে মাছের মোট প্রজাতি রয়েছে ৫৬৯টি। এ হিসাবে মাছের প্রজাতির বৈচিত্র্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২২১টি রাষ্ট্র ও দ্বীপের মধ্যে ১০০তম। তবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন কাজী আহসান হাবীবের নেতৃত্বে একদল গবেষকের তৈরি করা হালনাগাদ তথ্য বলছে, দেশে শুধু সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি রয়েছে ৭৪০টি। এদিকে সরকারি হিসাবে দেশে স্বাদুপানির মাছের প্রজাতি ২৬৪টি। এই দুই হিসাব যোগ করলে বাংলাদেশে মাছের প্রজাতির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!