খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ মাঘ, ১৪৩১ | ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  নরসিংদীতে আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অন্তত ১০ জন
  মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ আর নেই

দেশে দেশে বৈচিত্র্যময় ঈদ

গেজেট ডেস্ক

ঈদ, কথাটি শুনলেই মনের ভেতর নিশ্চয়ই একটা বর্ণিল উৎসবের ছবি ভেসে ওঠে। এক মাস রোজা রাখার পর এক সন্ধ্যায় বেজে ওঠা ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’, সবার আগে নতুন চাঁদ দেখার মিশন, চাঁদরাতের হৈহুল্লোড়, নতুন জামা, বাড়ি ফেরা, ইচ্ছেমতন খাওয়া আর সালামি আদায় কিংবা সালামি থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়ানো।

ঈদ, কথাটি শুনলেই মনের ভেতর নিশ্চয়ই একটা বর্ণিল উৎসবের ছবি ভেসে ওঠে। এক মাস রোজা রাখার পর এক সন্ধ্যায় বেজে ওঠা ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’, সবার আগে নতুন চাঁদ দেখার মিশন, চাঁদরাতের হৈহুল্লোড়, নতুন জামা, বাড়ি ফেরা, ইচ্ছেমতন খাওয়া আর সালামি আদায় কিংবা সালামি থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়ানো।

কিন্তু গোটা বিশ্বজুড়ে নিশ্চয়ই ঈদের চিত্র এমনটা নয়, দেশে দেশে রয়েছে নিজস্ব ঈদ সংস্কৃতি। আসুন জেনে নেই কয়েকটি দেশে ঈদুল ফিতর পালনের চিত্র।

নাইজেরিয়া

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। প্রায় ২২ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটির অর্ধেক মুসলিম। আর তাই ঈদ বেশ ঘটা করেই পালিত হয় দেশটিতে। অধিকাংশ নাইজেরিয়ান মুসলমান থাকেন দেশটির উত্তর প্রান্তে, সেখানে রোজার ঈদের স্থানীয় নাম আস সাল্লাহ, যার অর্থ সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো।

আর স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে নতুন পোশাক পরে প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষ ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে ঈদের সকালে নামাজে যায়, যা স্থানীয় ভাষায় ‘দুরবার’ নামে পরিচিত।

ঐতিহ্যবাহী খাবারে মাঝে সুয়া (শিক কাবাবের মতো খাবার), জল্লফ রাইস (টমেটো, মশলা এবং নানা সবজি দিয়ে রান্না করা ভাত) এবং মইন মইন (সেদ্ধ মটরের পুডিং) ঈদের দিন খুব জনপ্রিয়।

তবে একটি ব্যাপারে নাইজেরিয়া অনেকটা আমাদের দেশের মতোই। রমজানের প্রথম সপ্তাহেই মেয়েরা নতুন কাপড় কিনে ফেলে এবং পরের তিন সপ্তাহ ধরে সব দর্জির দিন কাটে চূড়ান্ত ব্যস্ততায়।

রাশিয়া

আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ায় মুসলিম জনগোষ্ঠী মূল জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম হলেও (দেড় কোটির মতো), দেশটিতে বেশ কতগুলো প্রদেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই বৈচিত্র্যময় রাশিয়ায় ঈদও

পালন হয় প্রদেশভেদে নানা বৈচিত্র্যে। এসব প্রদেশে ঈদের দিনটি ছুটি থাকে। তবে চেচনিয়া ও দাগেস্তান প্রদেশ দুই ঈদের ছুটি ৩ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। চেচনিয়ায় ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই বাড়িঘর একেবারে ঝকঝকে তকতকে করে ফেলা হয়। চাঁদ রাতে গভীর রাত পর্যন্ত গৃহিণীরা মিষ্টান্ন আর স্ন্যাকস তৈরি করেন। ঈদের দিন মেয়েদের পোশাক অসম্ভব উজ্জ্বল হয়, যেন তারা কোনো বিয়েবাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে!

ঈদের নামাজ শেষে মৃত আত্মীয়দের কবর জিয়ারত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রাশিয়ান মুসলিমদের কাছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার ঈদের একটি মজার মিল আছে। বাংলাদেশে কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্থানে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদ পালিত হয়। তেমনি রাশিয়ার দাগেস্তান প্রদেশেও প্রায় সব বছরই আলাদা আলাদা দিনে ঈদ পালন হয়। তবে রাশিয়ার বিভিন্ন অংশের লোকজন জাতীয়ভাবে ঈদ পালনের ১ দিন পর ঈদ পালন করেন।

উজবেকিস্তান

মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানেও ঈদুল ফিতর অন্যতম এক আনন্দের দিন। স্থানীয়দের কাছে দিনটি পরিচিত ‘রুজা হায়িত’ নামে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকা উজবেকিস্তানে দীর্ঘদিন ঈদে কোনো

ছুটি ছিল না। তবে স্বাধীনতা ঘোষণার পর দেশটিতে তিন দিনব্যাপী ছুটি নিয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়। ঈদের আগের দিনটিকে তারা বলে আরাফা। আর এই দিনে প্রায় প্রতিটি উজবেক পরিবারে ঐতিহ্যবাহী প্যাস্ট্রি কুশ টিল, বুগিরসক; অভিজাত প্যাস্ট্রি ওরামা, চাক-চাক ইত্যাদি তৈরি করা হয়। আর রাতে ঘরে ঘরে উজবেক প্লভ রান্না হয়। এটি বিরিয়ানির মতো খাবার হলেও অঞ্চলভেদে রান্নায় অনেক বৈচিত্র্য থাকে। একে অপরের বাড়িতে প্লভ পাঠানোও জনপ্রিয় একটি রীতি।

ঈদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, যে বাড়িতে নতুন বিবাহিত কনে আছে সেই বাড়িতে আত্মীয় প্রতিবেশীরা বেড়াতে আসেন। আবার বাচ্চারাও পাড়া ঘুরে নতুন বউয়ের প্রশংসা করে মিষ্টি-চকলেট আদায় করে নেয়।

মরক্কো

উত্তর আফ্রিকার পাহাড়ঘেরা দেশ মরক্কোর প্রায় ৯৯ শতাংশ অধিবাসীই মুসলিম। স্বভাবতই ঈদুল ফিতর দেশটির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঈদের নামাজকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘মুসাল-লা’। ‘মুসাল-লা’তে সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়তে আসে। সাধারণত নিউক্লিয়ার পরিবারগুলো নামাজের পর দিনের প্রথমভাগে স্বামীর বাবার বাড়িতে আর তারপর স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বেড়াতে যায়।

নামাজ শেষে ঈদের উদযাপন অনেকটা ঘরোয়াভাবে বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গে হয়ে থাকে। নামাজের পর পরিবারের সবাই একত্র হয়ে নানা রকম মিষ্টি আর স্ন্যাকস খায়। আর এসব স্ন্যাকসের প্রায় সবগুলোতেই অপরিহার্য উপাদান হলো আলমন্ড। কাব ঘাজাল (আলমন্ডের পুর দিয়ে তৈরি এক রকম পুলিপিঠা), মাহাঞ্চা (আলমন্ড স্নেক প্যাস্ট্রি), ঘ্রিবা (চকোলেটি আলমন্ড কুকি) এমনই কয়েকটি খাবার। আমাদের দেশের সাথে মরক্কোর ঈদের খুব মজার একটা মিল হলো ঈদের সালামি বা ঈদি। এমনিতে নতুন পোশাক ছাড়া বাচ্চারা ঈদের জন্য আলাদা কিছু না পেলেও, ঈদের সারাদিন ধরে বড় কাউকে দেখলেই সালামি নিতে কেউ ভুল করে না।

তিউনিশিয়া

আফ্রিকার সর্বোত্তরের দেশ তিউনিশিয়ায় ঈদ অন্যতম আনন্দের উপলক্ষ্য। মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে ঈদ শুরু হয়ে যায় অনেকটা আমাদের মতোই, চাঁদরাত থেকে। এমনিতেই রমজান জুড়ে অনেক রাত পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। কিন্তু চাঁদরাতে খাবার স্টল, দোকানপাট সব প্রাণবন্ত থাকে একদম ফজর পর্যন্ত।

নারী-পুরুষ-শিশু সবাই ঈদের আনন্দে রাতভর ঘুরে বেড়ায়। ঈদের নামাজের পর তিউনিশিয়ান মুসলিমদের পছন্দের খাবার হলো খেজুর আর অলিভ অয়েলে তৈরি মিষ্টি খাবার আসসিদা। আরও থাকে বাকলাভা, কাক ভারকা, ঘ্রাইবা, ম্লাবেস, মাকরৌদ ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী পেস্ট্রি। আর এসব তৈরি করার জন্য ঈদের কয়েক রাত আগে থেকেই সারা রাতজুড়ে বাড়ির মেয়েরা (বিশেষ করে বয়স্করা) গান গাইতে গাইতে কাজ করে যায়। আর ছেলেরা পেস্ট্রির মিক্সচার নিয়ে যায় স্থানীয় কোনো বেকারিতে। সেখানেই বড় চুল্লিতে চলে পেস্ট্রি বানানো। পুরো এলাকা পেস্ট্রির সুবাসে ভরে ওঠে।

কেনিয়া

পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়াতে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও দেশটির ৫০ লাখেরও বেশি ইসলাম ধর্মালম্বী খুব উদ্দীপনা নিয়ে ঈদ পালন করে। ঐতিহ্যগতভাবে কেনিয়ার মুসলমানরা ঈদের আগে বাড়ি নতুন করে রঙ করে। সেটা সম্ভব না হলেও ঘরের কার্পেট, পর্দা, বিছানা সবকিছুতেই আসে নতুনের ছোয়া।

ঈদের দিনে কেনিয়ানদের কাছে খুব পছন্দের একটি খাবার হলো এমকাতে ওয়া মায়াই (আফ্রিকান স্পঞ্জ কেক)। ঈদের নামাজের পর বাচ্চারা নতুন জামাকাপড় পরে বেরিয়ে পড়ে ঈদির জন্য। তারা সারাদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরতে থাকে, আর প্রতিটি বাড়ি থেকেই হয় টাকা নয়তো কোনো মিষ্টান্ন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের মতো কেনিয়ার ঈদেও একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো মেয়েদের হাতে মেহেদীর নকশা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!