খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  সাতক্ষীরার তালায় ধানের ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত, আহত আরও ১১ জন
  চট্টগ্রামে লরির ধাক্কায় তরুণ নিহত, চার ঘণ্টা পর পানির নিচে শিশুর সন্ধান
৩১ জেলায় মারা গেছে ২৯ জন

দেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা

গেজেট ডেস্ক

ভারী বৃষ্টি কমলেও উজানের পানি নিচের দিকে নেমে আসতে শুরু করায় দেশের ৩১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা বাড়ছে। এসব জেলার ১৪৩টি উপজেলার ৭৯৪টি ইউনিয়নের ৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ পরিবার এখন পানিবন্দি মানবেতর জীবনযাপন করছে। শনিবার (২৫ জুলাই) পর্যন্ত এই ৩১ জেলায় মোট ২৯জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। উজানের পানির কারণে আগামী দু’দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া ও বন্যা সংশ্লিষ্টরা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা বাড়তে থাকতে পারে। একই সময়ে বাড়বে পদ্মা ও গঙ্গা নদীর পানি। ঢাকা জেলার আশেপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে, জেলাগুলোর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এদিকে, শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানও সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, জামালপুর এবং নওগাঁ জেলায় আগামী দু’দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এরপর পানি কমতে পারে। তারপরও সমুদ্রে যদি জোয়ার থাকে তাহলে মধ্যাঞ্চলের পানি কমতে বিলম্বিত হতে পারে, তা না হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশের সব এলাকা থেকে পানি নেমে যেতে পারে।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্যাকবলিত ৩১টি জেলা হলো, ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ।

বিটিভি’র ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যমতে, সারাদেশে পর্যবেক্ষণাধীণ ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৭টির, হ্রাস পেয়েছে ৪৩টির, অপরিবর্তিত রয়েছে একটির এবং বিপদসীমার উপরে নদীর সংখ্যা ২০টি।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র নদীর নুনখাওয়া পয়েন্টের পানি ৬৫, চিলমারী পয়েন্টে ৭৭, ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে ৭৫, করতোয়া নদীর চকরহিমপুর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ১০৪, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে নতুন করে ১১০, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১১৭, কাজিপুর পয়েন্টে ৯৪, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৮৩, আরিচা পয়েন্টে ৬৬, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১০২, সিংড়া পয়েন্টে ৯০, ধলেশ্বরী নদীর জাগির পয়েন্টে ৮০, এলাসিন পয়েন্টে ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। লাক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে ২৭, কালিগঙ্গা নদীর তারাঘাট পয়েন্টে ৯৮, আত্রাই নদীর আত্রাই পয়েন্টে ২৭, বালু নদীর ডেমরা পয়েন্ট ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১১১, ভাগ্যকূল পয়েন্টে ৭০, মাওয়া পয়েন্টে ৬১ এবং সুরেশ্বর পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্টে ২৭, তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পয়েন্টে ৩০, মেঘনা নদীর চাঁদপুর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ২৭, আরিয়ালখান নদীর মাদারীপুর পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আবার, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী- ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টি কমে আসলেও আগামী তিন থেকে ৪দিন আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে এসময় সাময়িকভাবে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদনদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আগামী ২৪ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারিধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টি কমে এলেও উজানের পানি এখন নিচের দিকে নামছে। ফলে মধ্যাঞ্চলে পানি এখন বাড়বে। আগামী কয়েকদিন আর ভারী বৃষ্টি হবে না। এতে পানি নেমে গেলে আর বৃদ্ধির শঙ্কা নেই।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!