খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

দেবহাটায় ভূমিহীনদের বসতঘরে আগুন, ভাংচুর ও লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিশাখালিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের নয়টি বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ ও চারটি ঘর ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরে বাধা দেওয়ায় সাতজন ভূমিহীন নারীসহ ১০ জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোর রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় খলিশাখালির পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গাজীরহাট সড়কের খলিশাখালি নামক স্থানে পাকা রাস্তার ধার দিয়ে ছোট ছোট খুপড়ি ঘরে শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে খায়রুল ইসলাম, তার শালিকা মুনিয়া খাতুন, সবুজ সরদার, আব্বাস আলী, ফতেমা খাতুন, তাছলিমা খাতুন ও ফরিদুল ইসলামসহ নয়জনের বসতঘর পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। পুড়ে গেছে ভূমিহীনদের ব্যানার ও ব্যানারে থাকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। এ ছাড়াও চারটি বসতঘর ভাংচুর করা হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলায় আহত ১০জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় খলিশাখালির পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ভূমিহীন মোমেনা খাতুন জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে তিনি এক সন্তানকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত একটার দিকে মোটর সাইকেলের আওয়াজ পেয়ে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ডাক দেন পাশের ঘরের মুনিয়াকে। এর কিছুক্ষণ পর প্রথমে তিনটি মোটর সাইকেল নয়জনকে গাজীরহাটের দিক থেকে বদরতলার দিকে যেতে দেখেন। কিছুক্ষণ পর আরো সাতটি মোটর সাইকেলে ২১ জন তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে তারা তার ও মুনিয়ার বসত ঘরে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে বাড়ি দিতে থাকেন। এ সময় তারা চিৎকার করলে সন্ত্রাসীরা তাদের ঘর ভাংচুর করে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। লুটপাট করা হয় ঘরের মালামাল। ভাংচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তাকে ও মুনিয়াকে পিটিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।

আকলিমা খাতুন তার ঘরে আগুন দেওয়ার কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, রাতে আঁধারে গোলাম কাজী, সালাম, নজরুল, আনছার ও তাদের সন্ত্রাসীরা ভাংচুর চালিয়ে ঘরে আগুন দিয়েছে। আগুনের ভয়ে ঘর থেকে বের হতেই মারপিট করা হয়েছে। কথিত জমির মালিক দাবিদার ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও যেতে পারেননি চিকিৎসা নিতে। যেতে পারেননি থানায়।

ভূমিহীন আব্বাস আলী ও ফতেমা খাতুন বলেন, ভূমিদস্যুরা শুধু তাদের বসত ঘরে আগুন দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি। তারা বাসায় থাকা ভূমিহীনদের ব্যানার পুড়িয়ে দিয়েছে। পোড়ানো হয়েছে ব্যানারে থাকা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি।

ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে তাছলিমা খাতুন ও ফরিদুল ইসলাম। ক্ষোভের সঙ্গে তারা বলেন,‘ যারা জমির মালিকানা দাবি করে তারা সকলেই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির লোক। আজ তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে গরীব ও অসহায় ভূমিহীনদের উপর হামলা চালাচ্ছে। বাঁচার শেষ আশ্রয় টুকু আমরা জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে রক্ষা করবো।’

এঘটনার প্রতিবাদে দেবহাটার খলিশাখালি ভূমিহীন জনপদে বিক্ষোভ মিছিল করে ভূমিহীন নারীরা। তারা খলিশাখালিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ ও চারটি ঘর ভাংচুরের ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কাজী ও আব্দুস সালাম বলেন, ‘জবরদখলকারি ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। তারা আইনগত ভাবে তাদের মোকাবেলা করবেন। খুপড়ি ঘর পোড়ানোর গল্প বানিয়ে আমাদেরকে বোকা বানানো যাবে না।’

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুর রহমান জানান, ‘এ ঘটনায় তার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৪ ফেব্রুয়ারি খলিশাখালির ৪৯৯ একর জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশকে ঘিরে গত ১১ সেপ্টেম্বর ভূমিহীনরা ওই জমি সরকারি খাস জমি হিসেবে দাবি করে বসবাস শুরু করে। এ ঘটনায় ভূমির মালিক দাবিদাররা ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি দ্রুত বিচার আইনসহ সাতটি মামলা করেছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!