যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ৩০ বিঘা জমির বোরো ধানের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাতের আঁধারে সেচ পাম্পের ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (২ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার বাকোশপোল গ্রামে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে যায় সেচপাম্পের ঘরটি।
বর্তমানে নিরাপত্তার অভাবে সেচযন্ত্রটি চালু করতে পারছে না মালিক পক্ষ। কৃষকদের দাবি, দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সাথে নির্বিঘ্নে সেচ পাম্প চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। তানা হলে তারা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, মণিরামপুর উপজেলার বাকোশপোল গ্রামের এলাহী বক্সের মেয়ে আকলিমা বেগমের কাছ থেকে ৫ বছরের জন্য সেচ পাম্পটি লিজ নিয়েছেন একই গ্রামের জাকির হোসেন। তিনি বর্তমানে সেচপাম্পটি পরিচালনা করেন। তার সেচপাম্পের মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের ৩০ বিঘা জমিতে পানি সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু জমি ও সেচপাম্পের মালিক আকলিমা বেগমের সঙ্গে একই গ্রামের ফজলুর রহমান, মিন্টু রহমান, সোহরাব ও সুরাফের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের জের ধরে তারা জাকির হোসেনকে বিভিন্ন সময়ে পাম্পটি ছেড়ে দেবার হুমকি ধামকি দিয়েছেন। তারা আকলিমা বেগমের সেচপাম্প ও বর্গা জমি চাষ থেকে বিরতি থাকতে চাপ দিতে থাকেন। তাদের কথা না শোনায় মোটর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। এরই জের ধরে তার পাম্প ঘরে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে জাকির হোসেন জানিয়েছেন।
এদিকে, পাম্প বন্ধ থাকায় গ্রামের ৩০ বিঘা জমির বোরো ধানের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ হচ্ছে, বর্তমানে কৃষকরা ধানের বীজতলা তৈরির কাজ করছেন। তারা বলেছেন, গত ২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে দুর্বৃত্তরা সেচপাম্পের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পাম্পসহ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর থেকে জাকির দুর্বৃত্তদের ভয়ে সেচপাম্প চালু করতে পারছেন না। এ কারণে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা কিভাবে বোরোর বীজতলা তৈরি ও আবাদ করবেন তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে সেচ পাম্পের ইজারাদার জাকির হোসেন বলেন, আকলিমা বেগমের কাছ থেকে ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সেচ পাম্প পরিচালনা করছি। আকলিমা বেগমের সঙ্গে যাদের বিরোধ, তারা বিভিন্ন সময়ে তাকে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আমি আমলে নিইনি। এরই খেসারত হিসেবে গত ২ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে তার সেচপাম্পের ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। এখন ভয়ে সেচপাম্প চালু করতেও পারছি না। যদিও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক নির্ভয়ে সেচপাম্প চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমি ভরসা পাচ্ছি না। নানাভাবে তাকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে।
বাকোশপোল গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, এই সেচপাম্পের আওতায় আমার দেড় বিঘা জমি রয়েছে। চাষের জন্য এখন বীজতলা তৈরির সময়। সেচের অভাবে বীজতলা তৈরি করতে পারছি না। এতে বোরো ধান চাষেও সমস্যা হবে। তিনি দ্রুত সেচপাম্প চালু করার দাবি জানান।
গ্রামের অপর কৃষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, মোটরঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পানির অভাবে ধানের পাতো (চারা) দিতে পারছি না। আর পাতো না দিতে পারলে বোরো ধান চাষ করতে পারবো না। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন। একই কথা বললেন কৃষক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে মোটর (সেচযন্ত্র) পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শিগগির মোটর চালু করতে হবে। পানি না পেলে আমরা বোরো ধান চাষ করতে পারবো না।
এ বিষয়ে জমির মালিক আকলিমা বেগম বলেন, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে। এ চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে ও জমি দখলের চেষ্টা করছে। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ইজারা দেওয়া জমির মোটর পাম্পের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ ব্যাপারে মণিরামপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক বলেন, সরেজমিন গিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা দেখেছি। সেখানে দু’পক্ষের কিছু সমস্যা আছে। তবে বোরো আবাদ যাতে বিঘ্ন না হয়, তার জন্য সেচ পাম্প চালু করার কথা বলা হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে পাম্পটি চালু করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
খুলনা গেজেট/ টিএ