খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
যশোরের রানার সম্পাদকের শাহাদতবার্ষিকী সোমবার

দু’যুগ অন্ধকারে সাংবাদিক মুকুল হত্যার বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

৩০ আগস্ট যশোরের সাহসী সাংবাদিক দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ২৩ তম শাহাদতবার্ষিকী। প্রথিতযশা সাংবাদিক মুকুল খুন হয়েছেন ২৩ বছর আগে। প্রায় দুই যুগ অতিবাহিত হয়ে গেলেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের বিচার আজো হয়নি।

মুকুল হত্যা মামলার বিচার চাইতে চাইতে নিহতের স্বজন ও সহকর্মী সাংবাদিকরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। আদৌ বিচার পাবেন কিনা বাদীর এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না কেউ। না পাবলিক প্রসিকিউটর, না সহকর্মী সাংবাদিকরা।

১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল রিকশাযোগে শহরের গাড়িখানা থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এই চার্জশিট নিয়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা। এক পর্যায়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম থেমে যায় আইনি জটিলতায়।

প্রায় দুই যুগ বিচার না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন দেশজুড়ে আলোচিত এই মামলার বাদী নিহত মুকুলের সহধর্মিণী হাফিজা আক্তার শিরিন। বর্তমানে তিনি হতাশায় মামলার আদ্যপান্ত ভুলতে বসেছেন। মামলার প্রসঙ্গ এলে তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন। এখন আর তিনি এ মামলা নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে চান না। আর কোনো কারণে কথা বললেও তার কান্নায় নিরব হয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। মামলা নিয়ে হাফিজা আক্তার শিরিনের গত কয়েক বছর ধরে একই বক্তব্য।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ হত্যাকান্ডের বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। দীর্ঘ ২৩ বছরে যখন কিছুই হলো না, তখন সামনে আর কিছু হবে বলেও মনে করি না। এ কারণে মামলা সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া মানসিকভাবে ছেড়ে দিয়েছি।

এ মামলায় একজন আসামির হাইকোর্টে স্থগিত চেয়ে করা রিটের চূড়ান্ত আদেশ না আসায় যশোর স্পেশাল জেলা জজ আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে রয়েছে বছরের পর বছর। নিহতের স্বজন ও যশোরের সাংবাদিকরা অবিলম্বে মুকুল হত্যার বিচার শেষ করে আসামিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

আলোচিত এই মামলা সম্পর্কে আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাইকোর্টে রিট হওয়ায় স্পেশাল জজ আদালতে বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলায় একজন আসামির অংশ বাদ রেখে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। রিট হওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে চূড়ান্ত আদেশ না আসায় এ পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। হাইকোর্ট থেকে আদেশ আসলেই দ্রুত মুকুল হত্যা মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা।

দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর আরেক তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মওলা বক্স আরও দু’জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। ওই সময় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে দু’জনকে অব্যাহতি দেন আদালত। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে।

এদিকে, সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আরেক সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিট আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ফারাজী আজমল হোসেনের হাইকোর্টে করা অব্যাহতির আবেদনের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয় তার আইনজীবীকে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছরেও হাইকোর্টের কোনো আদেশ যশোরের আদালতে এসে পৌঁছেনি। এসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ২৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালোব্যাজ ধারণ, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এসব কর্মসূচিতে সকলকে অংশ নেয়ার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন সাংবাদিকদের সংঠনের নেতৃবৃন্দ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!