পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও আধুনিক স্পেস টেলিস্কোপ (মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র) জেমস ওয়েবের মাধ্যমে দুটি মৃত নক্ষত্রের সংর্ঘষের ছবি প্রথমবারের মতো তুলতে পেরেছেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা।
এই ধরনের মৃত নক্ষত্রের (নিউট্রন স্টার) সংঘর্ষের ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে মহাবিশ্বকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সহায়তা করবে বিজ্ঞানীদের।
মহাকাশের এমন দুর্লভ ছবি মানবজাতির সামনে এনে দেয়ার জন্য জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার উদ্ভাবিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটিকে।
জ্যোর্তিপদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক জো লিম্যানের ধারণা এমন সংঘর্ষের ফলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া বিভিন্ন রকমের কঠিন ধাতু হাজার হাজার বছর ধরে অন্য আরেকটি নক্ষত্র বা গ্রহ তৈরিতে মূল ভূমিকা রাখে।
মৃত নক্ষত্রে সংঘর্ষের সময় যে বিশাল আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে তা পৃথিবী থেকে কয়েক রাত ধরা পড়তে পারে। সে জন্য টেলিস্কোপটি নজরধারী বাড়িয়ে দিয়েছে।
জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় গতি বিবেচ্য বিষয়। পুরোপুরি বিলীন বা মিলিয়ে যাওয়ার আগে আমরা সেখানে অনেককিছুকে খুব অল্প সময়ের জন্য দেখতে পেয়েছিলাম।’
এমন নিউট্রন স্টারগুলোর এতো বেশি ভর যে এদের থেকে এক চা-চামচ উপাদানের ওজন হবে চার হাজার টনের সমান।
ছায়াপথের জন্ম ও বিবর্তন এবং নক্ষত্র ও গ্রহের সৃষ্টির কারণ জানতে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মহাকাশে পাড়ি জমায় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। এই স্পেস টেলিস্কোপটি নকশা ও নির্মাণে লেগেছে প্রায় ৩০ বছর। খরচ হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার।
গত ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে আরও স্পষ্টভাবে ছায়াপথ গুচ্ছের ছবি প্রকাশ করে এই অত্যাধুনিক টেলিস্কোপটি। এমনসব দুর্লভ ও স্পষ্ট ছবি নক্ষত্র ও গ্রহের জন্ম, বিবর্তন এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উম্মোচন করতে বিজ্ঞানীদের আরও বেশি সহায়তা করবে।
এর আগে ২০১৭ সালে হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই ধরনের সংঘর্ষ সৌভাগ্যক্রমে অনুধাবন করতে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
গত ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো জেমস ওয়েবের মাধ্যমে মহাবিশ্বের স্পষ্ট ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উচ্ছ্বসিত স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। টুইট বার্তায় জেমস ওয়েবের তোলা প্রথম ছবি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জ্যোর্তিবিজ্ঞান ও মহাকাশ অভিযাত্রার জন্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে তুলে ধরে জেমস ওয়েবের প্রথম ছবি। এবং এটি আমেরিকা ও পুরো মানবজাতির জন্য।’
নাসার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১১ জুলাই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেমস ওয়েবের তোলা ছায়াপথ গুচ্ছের প্রথম ছবি SMACS 0723 হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে উন্মেচন করেন।
জেমস ওয়েবের তোলা ফুল-কালার ছবি ও ডাটা, যা স্পেকট্রা নামে পরিচিত, সেগুলো নাসার লাইভ টেলিভিশন ব্রডকাস্টে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত নির্মিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও আধুনিক স্পেস টেলিস্কোপ (মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র) জেমস ওয়েব।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ১০ বিলিয়ন ডলারের জেমস ওয়েব নামের স্পেস টেলিস্কোপটি ফ্রেঞ্চ গায়ানা থেকে ইউরোপিয়ান আরিয়ান রকেটে উৎক্ষেপণ করা হয়। বাংলাদেশ সময় ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঐতিহাসিক এই অভিযানটি শুরু হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই