খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

দুই দশকেও এমপিওভুক্তি হয়নি চুকনগর মডেল মহিলা কলেজ, শিক্ষকদের মানবেতর জীবন

ডুমুরিয়া প্রতিনিধি

ডুমুরিয়ার চুকনগর মডেল মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার দুই দশকে পদার্পণ করেছে। কিন্তু এই নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আজও ননএমপিও থাকায় শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই চলতি অর্থবছরেই এমপিওভূক্তির জোর দাবি জানিয়েছে শিক্ষক কর্মচারীরা।

২০০২ সালের ২০ ডিসেম্বর ‘প্রস্তাবিত মডেল মহিলা কলেজ’ এই নামে কলেজটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পূর্তিতে, দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় আজও জোটেনি কলেজটির এমপিওভূক্তি! অথচ অনেক আশা এবং স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তৎকালীন সময়ে এলাকার কতিপয় শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় কার্যকরী কমিটি। কমিটির সদস্যবৃন্দের ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল, এলাকাবাসীর স্বপ্ন এবং প্রায় চল্লিশোর্ধ শিক্ষক-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ স্বপ্নপূরণের ভরসার কেন্দ্রস্থল এই কলেজটির এমপিওভুক্তি আজও কেন অধরা হয়ে আছে।

পৃথক পরিবেশে নারী শিক্ষার অগ্রগতির লক্ষ্যে এবং স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা ও দাবির ভিত্তিতে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ব্যাপক আলোড়ন ও সাড়া জাগালেও অদ্যবধি এমপিও না হওয়ায় নিরুপায় শিক্ষক-কর্মচারীগণ এযাবৎ বুকের ভিতর চাপা কষ্ট ও বেদনা পুষে রেখে আজও প্রতিষ্ঠানের পাঠদানসহ বিবিধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বুকভরা অনিশ্চিত এক আশা নিয়ে।

বলা যায় শূন্য পকেট এবং পেটের ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে চললেও অহেতুক বা ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বশীলতার এতটুকু ঘাটতি সহজে কেউ পড়তে দেননি আজও। ফলে প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থী ভর্তি ও জাতীয় পর্যায়ে পাসের হার পূরণে যথাসাধ্য অবদান রেখে চলেছে।

খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা এই তিন জেলার মিলনস্থলে ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত চুকনগর একটি সুপরিচিত বাণিজ্যিক এলাকা অবস্থিত মডেল মহিলা কলেজটি। ডুমুরিয়া, কেশবপুর এবং তালার- প্রায় পনের কিলোমিটার দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত এই তিন থানা সদর। এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত চুকনগর মডেল মহিলা কলেজটি। তাই দীর্ঘদিনের আবশ্যকীয় চাহিদা ছিল এলাকাবাসীর কাছে।

এ লক্ষ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০০২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠার পরপরই খুব দ্রুতই প্রাথমিক অনুমতি পায়। ২০০৫ সালেই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে।

২০০৩ সালে প্রথম বছরেই পৌনে দুই শতাধিক ছাত্রী ভর্তি হয় এ কলেজে। ২০০৫ সাল থেকে অত্র কলেজের নামেই শিক্ষার্থীরা যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হয়। কলেজটিতে বর্তমানে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান শাখার পাশাপাশি কারিগরি শাখাও চালু রয়েছে।

প্রথম থেকেই প্রতিবছর কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণও সন্তোষজনক ছিল। পাসের হার শতভাগ থাকার সত্ত্বেও ননএমপিও থেকেই ভাগ্যাহত এক করুণ পরিণতি বরণের মধ্য দিয়েই চলছে আজও কলেজটি।

সর্বশেষ একটি একাডেমিক বিল্ডিং প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা যাচাই ও সকল প্রকারের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি!

তৎকালীন কলেজ পরিদর্শক আব্দুল ওয়াহাবসহ বিভিন্ন সময়ে জেলা ও উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কলেজটি পরিদর্শনে এসে এর ভূয়সি প্রশংসা করেন।

এদিকে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই দায়িত্বশীলদের অনেকেই এমপিওর প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। কিন্তু দিন, মাস, বছর যায়। সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু এমপিওর ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে না যেন কোনভাবেই! আর এমনিভাবে আজন্মের পাপের বোঝা মাথায় নিয়েই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারী চাতকের ন্যায় অপেক্ষার প্রহর গুণেই চলেছে এর শেষ পরিণতিটুকু দেখার জন্য। এমনটাই অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

কলেজের অধ্যক্ষ এম আর মঈন বলেন, চলতি অর্থবছরে এমপিও প্রদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই আবেদন সম্পন্ন করেছে। তাদের সর্বশেষ আশা এমপিওভূক্তির জন্য যে কোনো প্রকারের বাঁধা অতিক্রম করে কলেজটির বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি ও ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর সর্বান্তকরণ প্রচেষ্টায় এবং তার হাত ধরেই এবার কলেজটি এমপিওভূক্তি হবে।

কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, চুকনগর মডেল মহিলা কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের কষ্ট দেখলে আমার খুব খারাপ লাগে। তাই সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কাছে আমার জোর দাবি কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে এবার কলেজটি এমপিও করতে সহযোগিতা কামনা করছি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!