“শেখ হাসিনার বারতা নারী-পুরুষ সমতা”। “নারী পুরুষ সমতায় তথ্য আপা পথ দেখায়” এই শ্লোগানেকে সামনে রেখে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় চালু হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) “তথ্য আপা” উদ্যোগ। ইতিমধ্যে দিঘলিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে নারীদের মাঝে “তথ্য আপা” উদ্যোগ বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীর দৈনন্দিন সমস্যার অনেক সমাধান হচ্ছে। “তথ্য আপা” উদ্যোগের মাধ্যমে উপজেলায় গত ২ বছরে ১৮ হাজার ৩১০ জন সুবিধাবঞ্চিত নারী সেবা পেয়েছেন। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সেবা পেয়েছে ৪ হাজার ৩৮ জন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন ১ হাজার ৬৫৭ জন। তথ্য কেন্দ্রে এসে সেবা পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৯২ জন। বাকী সবাই ডোর টু ডোর সেবা পেয়েছেন।
তথ্য আপা উদ্যোগের মাধ্যমে মহিলাদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে যে সব সেবা পেয়ে থাকেন তারমধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা প্রদান। চাকরির আবেদনপত্র পূরণ। ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল, ই-মেইল, ম্যাসেঞ্জার, স্কাইপির সাহায্যে যোগাযোগ। কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা ইত্যাদি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান। আইনী সহায়তার পরামর্শ প্রদান। মহিলাদের ডায়াবেটিকস পরীক্ষা, রক্তচাপ পরীক্ষা, তাপমাত্রা, ওজন মাপা। গ্রামীন নারীদের উৎপাদিত ও সংগৃহীত পণ্য বিক্রয়ের জন্য মার্কেটপ্লেস পরিচালনা। এসকল সেবাসমূহ বিনামূলে তথ্য কেন্দ্র হতে, ডোর টু ডোর পদ্ধতিতে এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
তথ্য প্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সমাজে জেন্ডার বৈষম্যের অন্তরায় দূর করার অভিনব, সৃজনশীল ও দৃষ্টি-উন্মোচনকারী উদ্যোগের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হল তথ্য আপা প্রকল্প। তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে নারীর ভাগ্য বদলের দিক নির্দেশনা রয়েছে “তথ্য আপা” উদ্যোগে। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামের অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারী তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং তাদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদান নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক “তথ্য আপা” ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে যোগাযোগ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি গৃহীত হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন জাতীয় মহিলা সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন তথ্য আপা প্রকল্প। প্রকল্পটি ১ম পর্যায়ে সারা দেশে ১৩ টি উপজেলায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্য ৪৯০ টি উপজেলায় তৃণমূল নারীদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে ৫ বছর মেয়াদী (২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২২ পর্যন্ত) “তথ্য আপা” ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প ২য় পর্যায় গৃহীত হয়। চলতি অর্থবছরে আরো ২ টি উপজেলাকে সম্পৃত্ত করে সারা দেশে মোট ৪৯২ টি উপজেলায় এ প্রকল্প চালু রয়েছে এবং সরকারের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগের সুফল সুবিধাবঞ্চিত নারীরা ভোগ করছেন।
উপজেলায় এ উদ্যোগের শুরু থেকে উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন সাইদা খাতুন। ইতিমধ্যে “তথ্য আপা” হিসেবে তিনি এ উপজেলায় বেশ প্রশংসিত হয়েছেন এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা তাঁর কাছে ছুঁটে যান তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা নিতে।
খুলনা গেজেট/ এস আই