খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  খা‌লিশপু‌রের হা‌সিবুর হত্যায় ২১ জনের যাবজ্জীবন, খালাস ৫

দিঘলিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ৯

দিঘলিয়া প্রতিনিধি

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় ব্যাপক ভাংচুর, হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সহিংস ঘটনায় উভয় গ্রুপের মোট ৯ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে মারাত্মক আহত অবস্থায় ৩ জন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এলাকায় ধমধমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার স্বার্থে রাতভর অভিযান চালিয়ে দিঘলিয়া থানা পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করেছে।

এলাকাবাসীর ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ শুক্রবার বিকালে বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ গ্রামে ৪ টি সাইকেলে করে ৬ জন নির্বাচনী প্রচারণায় যায়। মটর সাইকেল আরোহী সবাই ছিলো ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী জাকির হোসেনের সমর্থক। সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বারাকপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আনছার আলী তখন কর্মী সমর্থক নিয়ে উক্ত এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন। নন্দনপ্রতাপ ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় শেখ আনছার আলীর সমর্থকরা লাঠি সোটা দিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করে এবং মটর সাইকেল ৪ টি ভাংচুর করে। মটর সাইকেল আরোহীরা হলো আজাদ (৪২), গাজী শাহারিয়ার হোসেন পাভেল(৩৫), তরি মোড়ল (৩৪) ও সোহেল (৩২)। তাদের দুই সহযোগী এহিয়া মোড়ল (৩০) এবং সাইদুল (৩৪)। এদের মধ্যে মারাত্মক আহত অবস্থায় আজাদ, সোহেল এবং সাইদুল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

হামলার ঘটনা গাজী জাকির হোসেনের সমর্থকরা জানার পরে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় গাজী জাকির হোসেনের সমর্থকরা বারাকপুর বাজারে শেখ আনছার আলীর সমর্থক রাসেল, টুটুল বাবুল, তৈয়ব মুন্সি এবং তাহেরের দোকান ভাংচুর করে। এ সময় শেখ আনছার হোসেনের সমর্থকরা গাজী জাকির হোসেনের সমর্থকের ১ টি দোকান ভাংচুর করে। লাখোয়াটী গ্রামেও এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে লাখোয়াটী বাজারে ১ টি দোকান ভাংচুর হয়।

সহিংস ঘটনার সংবাদ পেয়ে দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আহসানউল্লাহ চৌধূরীর নেতৃত্ব একদল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষে উভয় গ্রুপের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করে।

গ্রেপ্তারকৃত ৯ জন হলো বারাকপুর গ্রামের মাহাবুব শেখ (৩৫), শোভন মোড়ল (২৫), নাসিমউদ্দিন (২২), রুহুল আমীন ওরফে আকাশ (২০) ও আসিফ ফকির (২০)। লাখোয়াটী গ্রাম থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো জাহিদুল সিকদার(৪২),আনিচ শেখ (৪০), মুরাদ (৩৫) ও রবিউল শেখ (৩৪)। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি। সহিংস ঘটনার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী পরস্পরকে দায়ী করেছে।

ঘটনার ব্যাপারে মুঠোফোনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, নন্দনপ্রতাপে ৪ মোটর সাইকেলযোগে আমার ৬ জন সমর্থক নৌকা মার্কার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে যায়। তখন আনছার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাদের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করে এবং মোটরসাইকেল ৪ টি ভেঙ্গে চুরমার করে।

এ ব্যাপারে সতন্ত্র প্রার্থী শেখ আনছার আলীর বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে আমি আমার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নন্দনপ্রতাপ গ্রামে নির্বাচনী গণসংযোগ করছিলাম। এ সময় আমার এক কর্মী মনিরুল ইসলাম (৩৫) গণসংযোগ স্থল থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছিলো। তখন তাকে একা পেয়ে গাজী জাকির হোসেনের ৪ মোটরসাইকেল আরোহীসহ ৬ জন সমর্থক তাকে পিটিয়ে পাশ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয়। মনিরুল মোবাইলের মাধ্যমে এ সংবাদ আমার সাথে থাকা কর্মী সমর্থকের ফোনে বললে তারা মোটরসাইকেল আরোহীদের উপর হামলা করে।

এর আগে ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনকে বারাকপুর বাজারে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ আনছার আলীর সমর্থকরা লাঞ্চিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় উভয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন মারাত্মক আহত হয়েছিলো। তখন আনছার এবং তার সমর্থকরা হামলা চালিয়েছিলো চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনের বাড়িতে। ঐ ঘটনার জের ধরে গাজী জাকির হোসেন, গাজী নাসিউদ্দিন, মোঃ হানিফ গাজী এবং রসুল শেখ বাদী হয়ে দিঘলিয়া থানায় পৃথক ৪ টি মামলা দায়ের করেছিলো।

দিঘলিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আহসানউল্লাহ চৌধূরী এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!