খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের সুগন্ধি গ্রামের ১৫ নং দেবনগর মৌজার ২৪০৭ নং দাগে সরকারের বন্দোবস্তকৃত যা সর্বশেষ ভি আর এস জরিপে সরকারের খাস খতিয়ান ভূক্ত ৩০ শতাংশ জমি। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন সম্প্রতি এই ৩৪ শতাংশ সরকারি খাস জমির উপর ৬ জন অস্বচ্ছল মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বিনামূল্যে জমি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। প্রত্যেকটি বীর নিবাস আবাসন নির্মাণের জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। ৪ শতাংশ জমির উপর এক একটি বীর নিবাস নির্মাণ করা হবে।
ইতিমধ্যে এ উপজেলায় ১২ জন মৃত অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আবাসন সুবিধার জন্য ১২ টি ‘বীর নিবাস’ তৈরীর জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪১৭ টাকা। উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে সরকারি খাস জমির উপর এ আবাসনগুলো নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে আবাসগুলো নির্মাণের জন্য টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মেসার্স জামাল ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে কার্যাদেশ পেয়েছেন এবং কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছেন।
কিন্তু সুগন্ধি গ্রামের উপরন্ত মৌজার ৩৩ শতাংশ জমির উপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য কাজ করছে একটি মহল। তারা খাস জমিটি স্বাধীনতার পর সোলোনামার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ক্রয় করে ভোগ দখল করে আসছে এই জায়গার দাবি করে মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ ১৭ জন বাদী হয়ে দৌলতপুর সহকারী জজ আদালত, খুলনা একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং দেঃ ৭৯৭ তাং ০৭/২০/২০২১ । মামলায় ১৭ জন বাদী হলেও মূলত ২ নং বাদী আঃ কাদের শেখকোন এক ব্যক্তি বিশেষের ইন্ধনে মামলাটি দায়ের করেছে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়।
মামলাটি দায়েরের পর থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বাপারে দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সারা দেশে প্রত্যেক উপজেলায় অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণের যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে এটা নিঃসন্দেহে সরকারের একটি মহতী উদ্যোগ। আমি সরকারের এ মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি আমার উপজেলায় সুগন্ধি গ্রামের যে বা যাহারা সরকারের বন্দোবস্তকৃত খাস জমি নিজেদের জমি দাবী করে অসাধু উপায়ে অসৎ উদ্দেশ্যে স্বাক্ষর জাল করে মামলা দায়ের করে বীর নিবাস তৈরীর কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তার তীব্র নিন্দাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই অসাধু চক্রের বিরুদ্ধ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার মোঃ মাহাবুবুল আলম খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘১৯৬১ সালের ভিপি আইনের ২৬ ধারামতে তাঁদের ঐ জমি ভোগ দখলের কোন এখতিয়ার নেই। এটা সরকারের বন্দোবস্তকৃত খাস খতিয়ানভূক্ত জমি। সর্বশেষ ভি আর এস জরিপে উক্ত জমি খাস খতিয়ানভূক্ত হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। আমরা লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে জমির দখল নিয়েছি। তাঁরা ভিপি আদালতে মামলা না করে দেওয়ানী আদালতে মামলা করেছেন যা আইনসন্মত নয়। যেহেতু উক্ত জমি সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত সেহেতু আমরা নির্ধারিত জায়গায় অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করে দিতে বদ্ধপরিকর। আর এই জাল জালিয়াতির বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধ ফৌজদারি আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামরুজ্জামান বাচ্চু খুলনা গেজেটকে বলেন, যে বা যার ইন্ধনে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ প্রশাসনের।
এ দিকে মামলা দায়েরকারী ৬ নং বাদাী মোঃ ইসমাইল হোসেন টিককা শেখ বলেন, ‘মামলার অভিযোগনামায় আমার যে স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে সেটা মূলত আমার স্বাক্ষর নয়। মামলার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, মামলার ৩ নং বাদী বারিক শেখ নামে যার স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে সে ৫ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন। মূলত মামলার ২ নং বাদী আঃ কাদের শেখ এবং তাঁর ভাই ১ নং সাক্ষী রাজ্জাক শেখ ছাড়া বাকী ১৫ জন বাদীর স্বাক্ষর জাল বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার মোঃ মাহাবুবুল আলম।
মামলার ৬ নং বাদী মোঃ ইসমাইল হোসেন টিককা শেখ খুলনা গেজেটকে বলেন, স্বাধীনতার পর সোলোনামার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ১৫ নং দেবনগর মৌজার ২৪০৭ নং দাগের ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়। তিনি স্বীকার করেন দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত জমির ডিসিআর কাটা হয়না।
মামলার ১৭ জন বাদী হলেন : ১. আঃ রাজ্জাক শেখ, ২. আঃ কাদের শেখ সর্বপিতা মৃত শেখ আলী আহন্মেদ সাং ফরমাইসখানা, সেনহাটী, দিঘলিয়া, খুলনা। ৩. বারিক শেখ পিতা মৃত বাহাদুর শেখ ৪. নাজির শেখ ৫. ইব্রাহীম শেখ, ৬. ইসমাল হোসেন টিককা শেখ ৭. আবেদা খাতুন ৮. হাজেরা খাতুন সর্বপিতা হেকমতুল্লাহ শেখ ৯. আবু হাসান ১০. আবু তালেব, ১১. শামছুর রহমান ১২. রাবেয়া খাতুন ১৩. রাহিমা খাতুন ১৪. টুকটুকি খাতুন সর্বপিতা মৃত হান্নান শেখ ১৫. মোসাঃ মোমেনা বেগম স্বামী মৃত হান্নাশ শেখ ১৬. জনি শেখ ১৭. রনি শেখ সর্বপিতা মৃত শওকত শেখ, সেনহাটী শওকত শেখ। সর্বসাং সুগন্ধি, পোঃ সেনহাটী, দিঘলিয়া, খুলনা।
খুলনা গেজেট/ এস আই