খুলনা, বাংলাদেশ | ২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১৬ জুন, ২০২৪

Breaking News

  রাঙামাটিতে বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
  রাজধানীর বনানীতে বাস চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
  কুমিল্লায় কাভার্ডভ্যানের পেছনে লিচুবাহী ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২

দিঘলিয়ায় মারুফ ও বাচা দ্বিতীয়বার, নাসরিন প্রথবার বিজয়ী

একরামুল হোসেন লিপু

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মারুফুল ইসলাম। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক তিনবার বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীগের সাবেক সহ-সভাপতি মল্লিক মহিউদ্দিনের চেয়ে ১৮ হাজার ৪৯ ভোট বেশি পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ আলী রেজা বাচা। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে তিনি ১ হাজার ৭৩৬ ভোট বেশি পেয়েছেন।

১১ সহস্রাধিক ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা অপরাজিতা সভাপতি নাসরিন আক্তার হীরা।

২১ মে ২য় ধাপে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে খুলনা তিন উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার এটিএম শামীম আহমেদের স্বাক্ষরিত বেসরকারি ফলাফল থেকে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে শেখ মারুফুল ইসলাম আনারস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৬৪৫ টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ৩ বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মল্লিক মহিউদ্দিনের দোয়াতকলম প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট ১৬ হাজার ৫৯৬। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোঃ আলী রেজা বাচা চশমা প্রতীকে ১২ হাজার ৬৪৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় আওয়ামী লীগনেতা মোঃ আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ খামারী তালা প্রতীকে পেয়েছেন ১০ হাজার ৯০৭ ভোট। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসরিন আক্তার হীরা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ১১ হাজার ৫৪৫ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। নাসরিন আক্তারের আনারস প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট ২৯ হাজার ৩৪৫ টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী নাসিমা বেগম হাঁস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৭ হাজার ৮০০। বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ শিরীন ময়না ফুটবল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ১০২।

নির্বাচনে এ উপজেলায় ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটারদের আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেখ মারুফুল ইসলাম।

শেখ মারুফুল ইসলাম জনপ্রতিনিধি হিসেবে মাঠে রয়েছেন দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে। দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। একই ওয়ার্ড থেকে তিনি বেশ কয়েকবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এবং পরবর্তীতে তার আশীর্বাদ নিয়ে বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান মোড়ল হায়দার আলীর বিপক্ষে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। পরবর্তীতে তিনি জেলা পরিষদের সদস্য পদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি খান নজরুল ইসলামকে ১ হাজার ৫৩৩ ভোটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে শেখ মারুফুল ইসলাম ভোট পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৫৬৪, খান নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৩১ ভোট আর মল্লিক মহিউদ্দিন পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৯০১ ভোট।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, গত নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকেই তিনি পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার টার্গেট নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। গত পাঁচ বছরে তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতা গড়ে তোলেন। চষে বেড়িয়েছেন উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি হাট, বাজার, গ্রামে । বাড়তি সুবিধা হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের আশীর্বাদ লাভ করেছেন। সব মিলিয়ে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রথমবারের মতো ১১ সহস্রাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়া নাসরিন আক্তার হীরা চমক সৃষ্টি করেছেন। জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মুখ হলেও নাসরিন আক্তার গত ৩ বছর ধরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। তার স্বামী মোঃ মুরাদুল ইসলাম একজন জাতীয় অ্যাথলেটার। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন এবং বিজয়ী হওয়া টার্গেট নিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন। আর্থিক সহায়তা করেছেন বিভিন্ন খেলাধুলা, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। আশীর্বাদ লাভ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!