দফায় দফয় গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার খামারিরা। এক মাস আগে যে গমের ভুসি ১ হাজার ৮৫০ টাকা ছিল তা এখন ২ হাজার ৪৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকে পরিমাণ মতো খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে গবাদিপশুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন।
আর এ গো-খাদ্যের দাম বাড়ার পেছনে আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজি এবং সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও সবক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দাবি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সকল পণ্যের দাম বাড়ছে।
উপজেলার বাগদাহ্ গ্রামের কণা এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান জনি দীর্ঘদিন যাবৎ গরু পালন করে আসছেন। খামারটি এতদিন ভালো চললেও সম্প্রতি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। এর প্রধান কারণ গবাদি পশুর দানাদার খাবারের উচ্চমূল্য। যে কারণে বাধ্য হয়ে গরুকে এখন কম খাবার দিতে হচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, এখন আর গরু পালার কোনো সুযোগ নেই। গত একমাস আগে যে গমের ভুসি কিনেছি ১৮শ’৫০ টাকায়, এখন তা কিনতে হচ্ছে ২৪শ’ ৫০ টাকায়। এছাড়া বাজারে এক মাস আগে তীর কোম্পানীর যে ভুসির দাম ছিলো ১৫শ’ টাকা, এখন তা ১৯শ’ ২০ টাকা এবং ফ্রেশ কোম্পানীর ভুসির দাম একমাস আগে ছিলো ১৩শ’ ৯০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ ৪০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, এক মাস আগে যে বুটের ভুসি ৮শ’৪০ টাকা দরে কিনেছি এখন তা ১ হাজার ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অটোকুড়া এক মাস আগে যার দাম ছিলো ১৬শ’ টাকা এখন তা কিনতে হচ্ছে ১৮শ’ টাকায়। ১৭শ’৫০ টাকার গম এখন ২১শ’ টাকা। ৪০ কেজির মুগের ভুসি আগে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে সাড়ে আঠারশো টাকায়। আর সয়ামিলের দাম এত বেশি যে আমরা এখন গরুকে তা খাওয়াচ্ছি না। এখন আমাদের ফার্ম অনেক লসে আছে, মালিকপক্ষের টিকে থাকায় এখন দুষ্কর।
জানা গেলো, অভয়নগর উপজেলাসহ যশোরাঞ্চলে উন্নত জাতের ঘাস চাষের বিষয়টি এখনো খুব একটা বাণিজ্যিকভাবে ছড়ায়নি। যে কারণে এ অঞ্চলের খামারিরা খড় ও দানাদার খাবার খাইয়েই গবাদি পশু পালন করে থাকেন। তবে দানাদার খাবারের বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অনেকেই খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে আবার গরু বিক্রি করে খামার ছোট করছেন।
আন্ধা গ্রামের গবাদী পশুর খামারি পঙ্কজ রায় বলেন, তার খামারে ৮ টি দুধের গাভী আছে। তার অভিযোগ, গো-খাদ্যের দাম বাড়লে সিন্ডিকেটের কারণে দুধের দাম সে অনুপাতে না বাড়ায় এখন লসে আছেন। একই অবস্থা গোটা উপজেলার খামারীদের। অনেকে গরু বিক্রি করে খামার ছোট করে আনছেন।
খামারিদের অভিযোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। কোথাও কোনো তদারকি কিংবা মনিটরিং নেই। হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের শতশত খামারিকে পথে বসতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নওয়াপাড়া বাজারের একজন গো-খাদ্য বিক্রেতা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে যখন গমের দাম বাড়লো সেই থেকে গমের ভুসির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেল। এছাড়া যখনই সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো সেসময় থেকে সয়ামিলের ভুসির দামও বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে খুব বেশি ভুট্টার আবাদ হয় না। এ কারণে যেসব এলাকায় ভুট্টা উৎপাদন হয় সেসব এলাকা থেকে সরাসরি বিভিন্ন ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভুট্টা কিনে নিচ্ছে, এতেকরে ভুট্টার বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
অভয়নগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার দে বলেন, সারাবিশ্বেই খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কীভাবে খামারিদের টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এজন্য খামারিদের উন্নত জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব খামারি আগামী কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করছেন তাদের জন্য ইউরিয়ার মোলাসেস তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, গবাদিপশুর খাবারের পাশাপাশি মুরগি ও মাছের খাবারেরও দাম বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ না নিলে মাছ-মাংসের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।