বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেছেন, শুধুমাত্র পড়াশোনা নয়; একজন শিক্ষার্থীকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ করে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সট্রা কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে নিজেদের সম্পৃক্ত করে দক্ষ হতে হবে। যাতে প্রতিযোগিতায় যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়া যায়। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কেবল ডিগ্রি দিয়ে বের করে দিলেই হবে না, তাদের দক্ষ করে তুলতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসের পাশাপাশি নিয়মিত ক্যারিয়ার সেমিনার হওয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন।
৩০ জানুয়ারি (সোমবার) সকাল ৯.১৫ মিনিটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর উদ্যোগে ‘বেসিকস্ অব জব প্রিপারেশন এন্ড জব হান্টিং প্রসেস’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচি সামনে রেখে বিপুল সংখ্যক সরকারি-বেসরকারি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সেখানে দক্ষ জনবল দররকার হবে। এজন্য এখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রি বা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত করা দরকার। যাতে তারা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এখন চাকরির ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। কিন্তু পাশাপাশি বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। তার চেয়েও বড় উদ্যেক্তা হয়েও কিছু করা যায় এবং অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি সম্ভব। তাই শিক্ষিত হয়ে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘরে বসে না থেকে উদ্যোক্তা হওয়া, সৃজনশীল কিছু করা বা উদ্ভাবনা দরকার। তিনি বলেন, চাকরিতে সন্তুষ্টি একটি বিষয়। কিন্তু চাহিদা কম থাকলে মানসিক চাপ কম থাকে। ব্যক্তি চাহিদা কম রেখে সমাজ, দেশ ও পরিবারের জন্য কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণে ধন্যবাদ দিয়ে এই ধরনের কর্মশালা প্রতি সপ্তাহে বা মাসে আয়োজন এবং মাঝে মাঝে জব ফেয়ার আয়োজনের জন্য আহ্বান জানান।
এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নির্মাণাধীন বিভিন্ন অবকাঠামো পরিদর্শন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে তাঁকে উপাচার্য ক্রেস্ট উপহার দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীদের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। এজন্য এখনই শিক্ষার্থীদের দক্ষ, সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দক্ষ জনশক্তি গড়ার দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিই এখন একমাত্র ভরসা নয়, প্রাইভেট সেক্টরের প্রতি সবারই আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে পারে, সেজন্য ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বড় পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ে জব ফেয়ার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জব ফেয়ার থেকে চাকরিপ্রার্থীরা নিজেদের সক্ষমতা জানতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, জব ফেয়ারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। ইতোপূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অফিসের প্রতিনিধিরা এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল আসবে। তারাও উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবেন।
উপাচার্য এমন একটি কর্মশালা আয়োজনের জন্য আইকিউএসির পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালকবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। একই সাথে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইকিউএসির পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইকিউএসির উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ৪টি সেশনে রিসোর্স পারসন হিসেবে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক ইমরান নেওয়াজ খুরশিদ ও এটুআই প্রোগ্রামের জাতীয় কনসালটেন্ট মুহাম্মদ শামীম কিবরিয়া। ফিডব্যাক গ্রহণ করবেন আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মতিউল ইসলাম। কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয় আন্ডারগ্রাজুয়েট ফাইনাল ইয়ার ও মাস্টার্স প্রোগ্রামের মোট ২০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড