খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৩ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কাভার্ডভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালক নিহত
  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার

থানা মামলা নিতে না চাইলেও রূপসার মুছা হত্যায় ফাঁসি হয় ৪ খুনির

নিজস্ব প্রতিবেদক

সকাল থেকে রূপসা উপজেলার আঠারোবাকী নদীর তীরে অসংখ্য মানুষের ভিড়। নদীতে অচেনা মানুষের লাশ ভাসছে। হঠাৎ জানা গেল এটি অন্য কারও নয়, আলাইপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মুস্তাকিম শিকদারের মেঝ ছেলে মুছা শিকদারের লাশ। হৈ চৈ শুরু হয়ে যায় এলাকায়। খুনী বাইরের কেউ নয়, ওই এলাকার। খুনিরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় প্রথমে মামলা নিতে চায়নি। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা দায়ের হয়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডের সূত্রপাত।

আলাইপুর গ্রামের মুস্তাকিম শিকদার তার বড় ছেলেকে নিয়ে মাছের ব্যবসা করেন। আর তার স্ত্রী রশিদা বেগম মেঝে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশে মুদি দোকানের ব্যবসা করেন। মুছা শিকাদার প্রায়ই দোকানের ভেতরে রাত্রি যাপন করতেন। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফজরের আযানের সময় ছেলে মুছাকে ডাকতে থাকেন। সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষ করে তিনি ছেলেকে পুনরায় ডাকেন। পরে দেখেন দোকানের বাইরে থেকে তালা দেওয়া ও তার ব্যবহৃত স্যান্ডেল বাইরে পড়ে রয়েছে। দোকানের সামনে মোটরসাইকেলের চাকার দাগ ও ধস্তাধস্তির কিছু আলামত দেখতে পেয়ে তার মনে সন্দেহ হয়। স্ত্রীকে ডেকে দোকানের তালা খুলে দেখে সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু সেখানে ছেলে নেই। মোটরসাইকেলের চাকার দাগ অনুসরণ করতে করতে তারা সামনে এগোলেও কোন খোঁজ না পেয়ে বাড়ি ফিরে কান্নাকাটি শুরু করে। দুই ঘন্টা পর ওই এলাকার ফারুক তার বন্ধু ইলিয়াজ শেখকে লাশের ব্যাপারে জানালে তিনি লাশটি দেখে চিনতে পারে, এটি মাছ ব্যবসায়ী মুস্তাকিম শিকদারের মেঝ ছেলে মুছা শিকদারের। এ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তারা বিষয়টি পুলিশকে জানায়। একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় থানার পুলিশ। ভিকটিমের পিতা মামলা করতে গেলে পুলিশ থানায় কোন অভিযোগ নেয়নি। পরে ভিকটিমের পরিবার আদালতের দারস্থ হন।

২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আমলী আদালত রূপসা থানায় প্রেরণ করলে মামলা রুজু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী বনি আমিন শিকদার, রহিম শেখ, রাজু শিকদার ও নুহু শেখ ভিকটিমের দোকান থেকে বাকিতে মালামাল ক্রয় করে টাকা দিতে অপরাগতা জানায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে আসামিরা মুছা শিকদারকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনার দু’দিন পর মুছাকে তারা হত্যা করে। এ হত্যা মামলার বিচার হয়েছে।

খুলনা সিনিয়র দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরি ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ে আসামি বনি আমিন শিকদার, রহিম শেখ, রাজু শিকদার ও নুহু শেখকে মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্ত সকলে জেল হাজতে রয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয় জেলা জজ আদালতে। বিচারক এ মামলার শুনানিকালে ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেন পিপি এনামুল হক ও এপিপি এম ইলিয়াস খান। আসামিপক্ষে ছিলেন মো. ফরহাদ আব্বাস ও নিরঞ্জন কুমার ঘোষ।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!