খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

‘ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের ভাঙা বেড়িবাঁধ সোমবার (৩১ মে) দ্বিতীয় দিনেও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টির কারণে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেওয়া দুই সহস্রাধিক মানুষকে কাজ শেষ না করেই চলে যেতে হয়েছে।

এদিকে বুকে ‘ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’ ও পিঠে ‘কয়রাবাসী বাঁচতে চায়’ লিখে কোমর পানিতে নেমে উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন মো. বায়জিদ হোসেন নামে এক যুবক। সোমবার (৩১ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বায়জিদ হোসেন বলেন, প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ইয়াসের প্রভাবে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি ঢুকছে। ঘর-বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। এখানে অধিকাংশ ঘরের মেঝে মাটি দিয়ে তৈরি। যে কারণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাটি সরে গিয়ে ঘর ধসে পড়ছে। একই সঙ্গে খাবার পানির অভাব রয়েছে। ঘের-পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। নোনা পানিতে মাছ মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খাবারের সংকট। এসব দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

তিনি বলেন, ত্রাণ দিলে হয়তো কয়েকদিন খেতে পারব। কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে প্রতি বছরই পানির মধ্যে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তাই আমাদের এক টাই দাবি ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। কয়রাবাসী বাঁচতে চায়।

কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, রোববার ভোরে দশহালিয়ার ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তবে দুপুরে জোয়ার চলে আসায় কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আজ সোমবার সকালে ফের কাজ শুরু করা হয়। বৃষ্টি আর জোয়ারের কারণে আজও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আজও দুই সহস্রাধিক মানুষ বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে অংশ নেয়।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, গত ২৬ মে (বুধবার) ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে কয়রার প্রায় ৩৫-৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এরপর বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার জোয়ারের পানিতে আরও ১০-১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়। শুক্রবার পাঁচটি স্থানে বেড়িবাঁধ মেরামত করায় কিছু গ্রাম পানিবন্দি থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে দশহালিয়ার দুটি ভাড়া বাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। এখনও অনেক গ্রাম প্লাবিত রয়েছে।

রোববার দশহালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণে অংশ নেয় তিন সহস্রাধিক মানুষ। তবে জোয়ারের কারণে তা শেষ হয়নি। আজ সোমবারও বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এখনো কাজ বাকি রয়েছে। গত দুইদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে কয়রার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসলি জমি। এখনো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ, বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে পানিবন্দিদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, দশহালিয়া গ্রামের ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ভাঙা স্থান আর অবশিষ্ট নেই। তবে কিছু স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ব্যাগ দিলেই কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণে সহায়তা করছে। এখানে অংশ নেওয়া মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমেই বাঁধ নির্মাণ করছে। এখনো ৩৫টি গ্রামে পানি রয়েছে।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!