খুলনার সর্ববৃহৎ পতিত জলাভূমি ভূতিয়ার বিল তেরখাদাবাসীর নিরব কান্না। পানিবদ্ধতায় দীর্ঘদিন পতিত থাকায় হতাশ ভূ-মালিকরা। গেল তিন বছর বিশাল ভূতিয়ার বিলের মাঝখানে দুই বিঘা জমিতে সাচিয়াদহ ইউনিয়নের কড়রিয়া এলাকার কৃষকরা পানির উপরে চাষাবাদ করছে মৌসুমী সবজি। ভাসমান এ সবজি চাষে সাফল্যের হাসি হাসছে কৃষকরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা এসব কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার হেক্টর আয়তনের ভূতিয়ার বিলে শরৎকালে পদ্মফুল দেখতে ভীড় করেন সৌন্দর্য্য পিপাসুরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূতিয়ার বিলের মাঝখানের দুই বিঘা জমি যেনো এক টুকরা উর্বর উদ্যান। দীর্ঘদিন পতিত বিশাল এ জলাভূমিতে এখন সবজি’র সমারোহ। সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত পরিবেশে ভাসমান বেডে লতা বিহীন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ভাসমান বেডে চাষাবাদ হচ্ছে- লালশাক, ওলকপি, উচ্চে, শসা, ধুনিয়া, ঢেঁড়শ, রসুন, পেঁয়াজ, আলুসহ অন্যান্য শাক-সবজি। গেল দু’বছরের চেয়ে এবার বাজার মুল্য বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
ভাসমান সবজি চাষী হরিশ বিশ্বাস বলেন, বসতবাড়ী ছাড়া আমার কোন জায়গা-ভূই নেই। ভূতিয়ার বিলের মাঝখানে ভাসমান সবজি চাষ করে আমি এখন সুস্থ আছি। ছেলেমেয়ের পড়া, নতুন করে ঘর নির্মাণ ও দৈনন্দিন সকল খরচ নির্বাহের একমাত্র উৎস আমার সবজি ক্ষেত।
তিনি আরও বলেন, বাজারে এখনকার সবজি নিয়ে গেলে মানুষ আগেই এইটা কিনে নেয়। সকলেই জানেন- এখানের সবজি বিষমুক্ত।পাইকাররাও আমাদের কাছ থেকে শাক-সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেখাদেখিতে অন্যরাও এখন ভূতিয়ার বিলে ভাসমান সবজি চাষাবাদ শুরু করেছে। সকলেই লাভবান হচ্ছি। একটা সময় তো এ বিলে কিচ্ছু হতোনা।
একই বিলের কৃষক নিখিল সরকার, রহমন বিশ্বাস, উষা মজুমদার, অধির মজুমদার, রমেন সরকার জানান, বর্তমান বাজারমুল্য ভালো থাকায়। ভাসমান সবজি চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। তবে ভূতিয়ার বিলে তাদের জমি নেই। এখানে সবজি চাষাবাদের ফলে ভূমি মালিকরা খুশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সবজি চাষাবাদে উৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে বীজসহ প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হাতে-কলমে কৃষকদের বেডে গিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি। প্রতিটি বেডে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতিমাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে কৃষকদের। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসছেন ভাসমান সবজি চাষে।
খুলনা গেজেট/এনএম