বেশ কিছু দিন ধরে তেরখাদা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে সার্ভার সমস্যা চলছে। এর ফলে শত শত জমির মালিক তাদের খাজনা পরিশোধ করতে পারছেন না। প্রতিদিন শত শত লোক ভূমি অফিসে সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে এমন সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে তেরখাদাবাসীকে। সমস্যা সমাধানে কোনো উত্তরও দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা। তাদের শুধু একটাই উত্তর, ‘সার্ভার নেই’। আমরা কিছুই করতে পারব না। যতদিন পর্যন্ত সার্ভার ঠিক না হবে, ততদিন কোনো কাজ হবে না। আমাদের কিছুই করার নেই।’
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সারা দেশের ন্যায় তেরখাদা উপজেলায় নিজ নামে নামজারি ও জমাভাগের আবেদন পর্যন্ত করতে পারছেন না সেবাগ্রহীতারা। এর আগে সার্ভার সিস্টেম আপগ্রেডেশনের জন্য সাময়িক বন্ধের নোটিশও দেওয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়, ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত সাময়িকভাবে মিউটেশনসংক্রান্ত সব সেবা বন্ধ থাকবে। এদিকে ভূমির মালিকরা খাজনা দিতে না পারায় জমি কেনা বা বিক্রি করতে পারছেন না। ১ ডিসেম্বর সার্ভার সংস্করণ শেষ হয়ে কাজ আবার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ভূমি অফিসগুলোতে সেই সেবা চালু হয়নি। এদিকে সার্ভার কাজ না করায় খাজনা আদায়ে অচলাবস্থা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। সার্ভার আপগ্রেডের আগে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ এলাকার তহশিল অফিসে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করে রসিদ সংগ্রহ করতেন। অনলাইনে খাজনা আদায় শুরু হলে সরকারের নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইট থেকে সার্ভারে গিয়ে সেই খাজনার টাকা পরিশোধ করে রসিদ সংগ্রহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে সার্ভার সংস্করণের কাজ শেষ না হওয়ায় কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, আগে তহশিল অফিসে গিয়ে জমির কাগজপত্র দেখিয়ে খাজনার পরিমাণ সম্পর্কে ভূমির মালিকরা নিশ্চিত হন। পরে তহশিল অফিস অনুমোদন দেওয়ার পর জমির মালিক নিজের সুবিধামতো জায়গা থেকে খাজনা পরিশোধ করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে শুধু ভূমিই নয়, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধনের মতো ক্ষেত্রেও সার্ভার একটি বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। ঘরে বসে বা নিজে নিজে খাজনা পরিশোধের পদ্ধতি থাকলেও অধিকাংশ মানুষই তা পারছেন না। বিভিন্ন দোকানে গিয়ে মানুষকে খাজনা পরিশোধ করতে হয়, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান সরকার সার্ভারের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সার্ভার উন্নয়নের জন্য দেশব্যাপী খাজনা আদায় বন্ধ রাখার নোটিশ দেওয়া হয়। কথা ছিল ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টার পর থেকে ভূমির মালিকরা খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সার্ভার ঠিক হয়নি। কখন ঠিক হবে, সেটিও অনিশ্চিত। এদিকে অনলাইনে খাজনা পরিশোধ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে একাধিক ভূমির মালিককে। তহশিল অফিসে গিয়ে মানুষ খাজনা পরিশোধ করতে পারছেন না।
মোস্তাফিজুর শেখ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি জমির খাজনা দিতে পারছি না বেশ কয়েক দিন ধরে। তাই ক্রেতাকে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে পারছি না। ক্রেতা আমাকে বারবার চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু কয়েক দিন ভূমি অফিসে ঘুরেও কোনো কাজ হচ্ছে না।’
বাদশা নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, কয়েক দিন ধরে ভূমি অফিসে যাওয়া-আসা করার পরও সার্ভার আপডেট না হওয়ার কারণে জমির নামজারি বা জমাভাগের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয় তেরখাদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আঁখি শেখ বলেন, সার্ভার আপডেটের কাজ চলছে। সবকিছুই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল আঞ্চলিকভাবে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এএজে