খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৬০
  জুলাই গণহত্যার বিচারে চলতি সপ্তাহে ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ, শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের বিরূদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে, তাদের ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তাও নেয়া হবে : চিফ প্রসিকিউটর
ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছে ‘খুলনা ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থা’

‘তৃপ্তির আহার’ এ তৃপ্ত অসহায়-দু:স্থ মানুষগুলো

এইচ হিমালয়

অর্থনীতির এই দুঃসময়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে সবাই ক্লান্ত। উচ্চমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জীবনে কে কার খবর রাখে ? এর মাঝেও এই শহরের অনাহারী মানুষের মুখে এক বেলা খাবার তুলে দিতে নীরবে ছুটে চলেছে একদল তরুণ। এক-দু’দিন নয়; টানা ১০ মাস ধরে অসহায়, দু:স্থ মানুষের মাঝে খাবার দিয়ে যাচ্ছে তারা। দু:সময়ে মানবতার জয়গান গাওয়া তরুণদের সংগঠনটির নাম ‘খুলনা ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থা’।

সংস্থাটির সদস্যরা জানান, ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে তারা প্রতিদিন ৮০ থেকে ২০০ জনের রান্না করেন। নির্দিষ্ট একটি স্থানে খাবার দিলে বা একটি জায়গায় বসে খাওয়ালে শহরের অন্যান্য এলাকার দুঃস্থরা বাদ পড়েন। এজন্য সপ্তাহে সাত দিন নগরীর পৃথক ৭টি এলাকায় রান্না করা খাবার বিতরণ করেন তারা। বিনামূল্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচির নাম ‘তৃপ্তির আহার’।

সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে বিনামূল্যে খাবারের বুথ চালু করেছে সংগঠনটি। আপাতত সেখানে প্রতিদিন ৩০-৪০ জন বিনামূল্যে তৃপ্তিতে আহার করছেন।

শুরুর গল্প

বিয়ে বাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেঁচে খাবার অসহায় দুঃস্থদের মাঝে বিতরণের কর্মসূচি নিয়ে ২০১৭ সালে শুরু হয় ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থার কার্যক্রম। অনুষ্ঠানে খাবার বেঁচে গেলেই ডাক পরে তাদের। গত ৫ বছরে খুলনার মানুষের কাছে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে ফুড ব্যাংক। করোনাকালে অক্সিজেন ব্যাংক, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, ছিন্নমূল শিশুদের জন্য স্কুলসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে সংগঠনটির। সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলো ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা।

সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ জানান, প্রতিদিন বিয়ে বাড়ি, হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবার থাকতো না। আবার অনেক সময় পরিমাণে কম থাকতো। সব এলাকার মানুষকে খাবার দেওয়া যেতো না। তখন পরিকল্পনা করি বেচে যাওয়া খাবারের পাশাপাশি আমরাই প্রতিদিন রান্না করা খাবার বিতরণ করবো। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বেশিরভাগই ছাত্র। পরিকল্পনা নিয়ে শুভান্যধায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করি। তারা সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে নিয়মিত রান্না শুরু হয়।

তিনি জানান, তৃপ্তির আহার কর্মসূচিতে দুই জন স্থায়ী দাতা সদস্য অর্থায়ন করেন। এছাড়া ফেসবুকে আমাদের কার্যক্রম দেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ অর্থ সাহায্য করেন। অনেকে নির্ধারিত দিনে বাজার করে দিয়ে যান। প্রথমদিকে প্রতিদিন ডিম ও খিচুরী রান্না হতো। এখন খিচুরির সঙ্গে মুরগির মাংস থাকে। এছাড়া যারা অনুদান দেন, তারা পছন্দ অনুযায়ী বাজার করে দিয়ে যান। ওই দিন মাছ, মাংস, বিরানীসহ নানা পদ থাকে।

তৃপ্তির আহারে একদিন

সংস্থাটির অস্থায়ী কার্যালয় নগরীর ফারাজীপাড়া পারিজাত ভবনে (সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর বাসভবন)। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সাদা ভাত ও সর্ষে ইলিশ প্যাকেট করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সবাই ছাত্র।

স্বেচ্ছাসেবক মেহেরাব রিশাদ জানান, এখন ইলিশের মৌসুম। কিন্তু দাম অসম্ভব। খেটে খাওয়া মানুষের ইলিশ মাছ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই তাদের একদিন ইলিশ খাওয়ানোর পরিকল্পনা করি। সে অনুযায়ী ডিম খিচুরির বদলে আজ সাদা ভাত ও সর্ষে ইলিশ রান্না হয়েছে। ৯০টি প্যাকেট করে স্বেচ্ছাসেবকদের দুটি দল ভাগ হয়ে খাবারের প্যাকেট নিয়ে বের হয়ে যায়। একটি দল নগরীর পুরাতন রেলস্টেশনে, আরেকটি খালিশপুর সরকারি পলিটেকনিকের সামনের বস্তিতে এই খাবার বিতরণ করে।

খাবার দেখে খালিশপুরে বস্তির শিশুরাই এগিয়ে এসেছিলো। শিশু সুরাইয়ার মা রেহেনা আকতার বলেন, মাঝে মাঝে ছেলেগুলো এসে বাচ্চাদের খাবার দিয়ে যায়। এতো ভালো খাবার কিনে খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই। ওদের খাবার সবাই আনন্দ দিয়ে খায়।

শিশু সোহেলের মা শিউলী জানান, ছেলের বাবা দৈনিক শ্রমিকের কাজ করেন। তিন বেলা খাবার জোটানো এখন কষ্ট। ছেলের মুখে ইলিশ তুলে দেওয়ার সামর্থ নেই। ইলিশের পিস অনেক বড়। মা-ছেলে বছরের প্রথম ইলিশ খেলাম।

স্বেচ্ছাসেবক জাহিদ মাঝি জানান, তৃপ্তির আহারের খাবার ৭ দিনে ৭টি স্থানে দেওয়া হয়। এর মধ্যে শনিবার নতুন রেলস্টেশনে, রোববার পুরাতন রেলস্টশন ও লঞ্চঘাটে, সোমবার বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষ্ণনগর খেলার মাঠে, মঙ্গলবার গল্লামারী বস্তি এলাকা, বুধবার রূপসা ঘাট ও বাজার এবং বৃহস্পতিবার শিশুদের স্কুলে। এর বাইরে শুক্রবার আলোচনা করে খাবার বিতরণ করা হয়।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবক আমিনুর রহমান, নয়ন হোসেন ও জুবায়ের সাদিক জানান, খাবার পাওয়ার পর অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর মুখ উজ্জল হয়ে ওঠে। তাদের ওই হাসি দেখে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমরা পরিকল্পনা করেছি আগামী বছর থেকে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করবো।

সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ জানান, ময়লাপোতা মসজিদের মতো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আরও কিছু ফ্রি খাবার বিতরণের বুথ খোলা হবে। সেখানে বিনা সংকোচে মানুষ তৃপ্তিতে আহার করবেন। খাবার বিতরণের সময় আমরা সব সময়ই বলি খাবার কোনো সাহায্য নয়। এটা এক মানুষের প্রতি অন্যের ভালোবাসা। আমরা শুধু এই ভালোবাসা ছড়িয়ে দেই।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!