খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়ার আহবান বিএনপির: মির্জা ফখরুল
  চলমান ইস্যুতে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮
আইনি ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটির সুপারিশ ধামাচাপা!

তিন বছরেও তিন কোটি টাকার টিএসপি সার বুঝিয়ে দেয়নি পরিবহন ঠিকাদার

বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) নামে আমদানি করা টিএসএপি সার গত তিন বছরেও বুঝিয়ে দিচ্ছে না পরিবহন ঠিকাদার চট্টগ্রামের নবাব এন্ড কো:। বিএডিসি খুলনার যুগ্ন-পরিচালক বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবার সুপারিশ করায় তাকে বদলী করা হয়েছে। তার বদলে পছন্দসই ব্যক্তিকে খুলনায় বদলী করে এনে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। টিএসপি সার কম থাকার পরও পরিশোধ করা হয়েছে তাদের পরিবহন বিল । ফলে সরকারের গচ্ছা যেতে বসেছে প্রায় তিন কোটি টাকা। উপরন্তু সেই ঠিকাদারকে আবারও নতুন করে কাজ দেয়া হয়েছে।

বিএডিসি খুলনার সহকারী পরিচালক নুরুজ্জামান জানান, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের নবাব এন্ড কো: ২০১৮ সালে দু’টি জাহাজে টিএসপি সার মোংলায় আনার পর খুলনা বিএডিসিকে বুঝিয়ে দেবার কথা ছিল। কিন্তু তারা আজও সেই টিএসপি সার সম্পূর্ণ বুঝিয়ে না দেওয়ায় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন খুলনা জিএমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তদন্ত কমিটিতে বিএডিসি ঢাকা অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন এবং তারা সরেজমিনে খুলনা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

তদন্ত কমিটি প্রধান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন খুলনার জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান তদন্তের করার কথা স্বীকার করে জানান, ঢাকা থেকে আসা বিএডিসি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তারা নবাব এন্ড কো:-এর সাথে সরেজমিনে খুলনার ঘাটগুলি পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ষ্টিভেটর, হ্যান্ডলিং ইউনিয়ন সহ সংশ্লিষ্ট দশটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন। তিনি বলেন, নবাব এন্ড কো: ঘাটতি টিএসপি সার খোলা আকাশে নীচে ঘাট এলাকায় থাকায় চুরি, নষ্ট হবার কথা দাবি করেছে। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক তাদের ক্ষতিপূরণ দেবার কথা। তদন্ত কমিটি সুপারিশ করে রিপোর্ট ঢাকায় প্রেরণ করেছে।

এব্যাপারে নবাব এন্ড কো: খুলনাস্থ কর্মকর্তা মি: বাপ্পির সাথে মুঠোফানে যোগোযোগ করলে তিনি চট্টগ্রাম অফিসের কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর দিয়ে সেখানে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। তবে বিএডিসির ২০১৮ সালের টিএসপি সার এখনও না দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, মামলা আছে। কোথায় কি মামলা, জানতে চাইলে চট্রগ্রাম অফিসে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান।

চট্টগ্রাম অফিসের এমডির পিএ জনার্ধন বাবু মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি খুলনার বাপ্পি সব জানে। বাপ্পি আপনার নম্বর দিয়েছে, জানানো হলে তখন তিনি জানান যে বাপ্পির সাথে কথা বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে ফিরতি কল করবেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি আর কল করেননি। এব্যাপারে একাধিকবার তার নম্বরে কল করলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। এমনকি মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তার জবাবও দেননি।

এ ব্যাপারে খুলনা হতে সদ্য বিদায়ী যুগ্ন-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, তিউনিশিয়ার হতে ২০১৮ সালে বিএডিসির আমদানি করা ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন টিএসপি সার নিয়ে এমভি আকস্যান্ড জাহাজ মোংলা আসে। এই টিএসপি হতে এখন সাড়ে ছয় হাজার মেট্রিক টন সার আজও বিএডিসিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নবাব এন্ড কো: বুঝিয়ে দেয়নি। একই বছর মরক্কো হতে এমভি ওয়াটার মারকুল নামে আরও একটি জাহাজে ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন সার মোংলা আসে। মোংলার জাহাজ থেকে সেই সার খুলনার উদ্দেশ্যে আনা হলেও একই ভাবে ৭ হাজার মেট্রিক টন বিএডিসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।

তিনি জানান, তদন্ত কমিটির সুপারিশ মত তিনি নবাব এন্ড কো: এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য গত ৪/৫ মাস থেকে নিয়মিত উর্ধতন কর্মপক্ষকে পত্র দিয়েছেন। তিনি বদলী হয়ে আসায় নিয়মানুযায়ী বর্তমান যুগ্ন-পরিচালক ব্যবস্থা নিবেন। তিনি অন্য কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএডিসি খুলনায় সদ্য যোগদান করা যুগ্ন-পরিচালক মো: রোকনুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, তিনি কিছুই জানেন না। বলেন, আগের বিষয় কিছু জানেন না। নির্দিষ্ট করে নবাব এন্ড কো: টিএসপি ঘাটতি সার, তদন্ত কমিটির বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে যান। পরামর্শ দেন ঢাকায় যোগাযোগ করতে।

বিএডিসির একটি সূত্র জানায়, প্রতিটন টিএসপি ডিলার মূল্য ২২ হাজার টাকা, সে হিসাবে সাড়ে ১৩ হাজার টন টিএসপির মূল্য দাড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা। এই সূত্র আরো জানায়, এসব টিএসপি সার জাহাজে বাল্ক কার্গো হিসাবে আসে, যা পারে কার্গো বার্জে খুলনার ঘাটে আনার পর ব্যাগ ভর্তি করা হয়। বাল্ক কার্গোতে সাধারণত ১৫-২০% বেশী সরবরাহ করে রপ্তানীকরক প্রতিষ্ঠান। তিউনিশিয়া আর মরোক্কো হতে আসা দু’টি জাহাজ থেকে ঠিকাদার ঘাটতিসহ অতিরিক্ত ১০% টিএসপি সার বুঝে নিলেও তারা বিএডিসিকে সমুদ্বয় সার সরবরাহ করেন। আবার সার বুঝে দেয়া না হলেও নবাব এন্ড কো: দুটি জাহাজের পরিবহন ভাড়া পুরাপুরি তুলে নিয়েছেন।

এর আগে বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকার আমলে খুলনা বিএডিসির গোডাউন তল্লাশী করে প্রায় ৯ কোটি টাকার সার ঘাটতি পাওয়া যায়। কয়েকটি মিডিয়া সংবাদ প্রকাশের পর দুদক খুলনা তদন্ত করে বিএডিসির কয়েকজন ষ্টোরকিপার সহ উর্ধতন কর্মকর্তার নামে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় বিএডিসির উর্ধতন কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

উল্লেখ্য ২০১৮ সালে বিভিন্ন মিডিয়াতে খুলনার খোলা আকাশের নীচে লক্ষ লক্ষ টন সার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। সেসব প্রতিবেদনে সার লুটপাট করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। হাজার কোটি টাকার এসব নন ইউরিয়া সার আমদানি, অর্থ বিনিয়োগ, ব্যাংক সুদের দায় দায়িত্ব বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি)। কিন্তু সেই সার রক্ষনাবেক্ষণ, গুদামজাত করার দায়িত্ব বছরের পর বছর পালন করছে কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

বিএডিসি নিযুক্ত ঠিকাদারি ছয়টি শিপিং প্রতিষ্টান এসব আমদানীকৃত সার রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিবহন কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলি হলো যথাক্রমে সাউথ ডেল্টা শিপিং এন্ড ট্রেডিং লি: ৪৭ দিলখুশা ঢাকা, নবাব এন্ড কোম্পানী আগ্রাবাদ চট্রগ্রাম, মেসার্স বার্ল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লি: ২০ দিলখুশা ঢাকা, এমএসকে শিপিং ম্যানেজমেন্ট এন্ড চাটারিং লি: যশোর রোড় খুলনা, তাবিবা সাইফুল্লা (জিএল) ধানমন্ডি ঢাকা, ও মেসার্স প্রোটন টেডার্স লি: দিলখুশা ঢাকা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!