সাতক্ষীরার তালায় টর্চার সেলে কলেজছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় এবার উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মৌমিত্র চক্রবর্তীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু ও সাধারণ সম্পাদক এম.এ খালেক স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কার পত্রে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে সৌমিত্র চক্রবর্তীকে বহিষ্কার করা হলো।
সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু জানান, সদ্য বহিষ্কৃত তালা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিবের সঙ্গে মিশে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী এক কলেজছাত্রকে নির্যাতন করেছে মর্মে আমরা জানতে পেরেছি। এটা জানার পর সৌমিত্র চক্রবর্তীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোববার (২৪ এপ্রিল) বেলা একটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘণ্টা তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষের টর্চার সেলে বেঁধে নির্যাতন করা হয় কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময়কে। বিবস্ত্র করে মারপিট, ভিডিও ধারণ ও দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিবের নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটান হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের গণেশ চক্রবর্তীর ছেলে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালা গার্লস স্কুলের পাশের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের অশোক দাসের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী জয় (২৪) ও তালা সদরের নজির শেখের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪)। আসামিদের বিরুদ্ধে তালা থানায় মামলা দেন নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের বাবা আজিজুর রহমান।
আলোচিত এই মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ আকিব গ্রেপ্তার হওয়ার ১৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে জামিন দিয়েছে সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মহিদুল ইসলাম।
প্রধান আসামি জামিন নেওয়ার পর মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী রাজীব চৌধুরী সঞ্জয় বলেন, মামলার জামিন শুনানি করেছি আমি। মামলাটি জামিনযোগ্য ছিল না। আমরা তো জামিন চাইব, বিচারক জামিন দিলে আমরা কী করতে পারি।
অন্যদিকে, মামলাটির বাদী আজিজুর রহমান বিচারকের বিরুদ্ধে উৎকোচ নিয়ে প্রধান আসামিকে জামিন দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, উৎকোচ অথবা আওয়ামী লীগের কোনো বড় নেতার টেলিফোনে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। দেশে বিচার ব্যবস্থা আছে বলে মনে হচ্ছে না। জামিনে মুক্ত হয়ে সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেছে। ১০-১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘিরে রেখেছিল।
মামলার বাদী আজিজুর রহমান আরও বলেন, আমার নিরাপত্তা কোথায়? এত বড় অপরাধ করার পরও প্রধান আসামিকে ছেড়ে দিল। তাদেরকে আরও অপরাধের দিকে উস্কে দেওয়া হলো। তারা বুঝলো অপরাধ করলে কোনো শাস্তি হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক।
মামলার আগামি ধার্য দিনে প্রধান আসামির জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
খুলনা গেজেট/ এস আই